
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে একদিকে যখন ব্যাটে-বলে নিষ্প্রভ পারফরম্যান্সে হতাশ করেছেন সাকিব আল হাসান, তখন অন্যদিকে তারই স্বদেশি তরুণ স্পিনার রিশাদ হোসেন জ্বলে উঠেছেন দুর্দান্ত বোলিংয়ে। ব্যাট হাতে কোনও অবদান রাখতে না পারলেও বল হাতে তিনটি মূল্যবান উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন এই তরুণ লেগস্পিনার। তার অলৌকিক স্পিন জাদুতে ৯৫ রানের বড় জয় পেয়ে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে পিএসএলের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লাহোর কালান্দার্স।
লাহোরের ব্যাটিং ঝড়: নাঈম, পেরেরা ও রাজাপাকশের দাপট
টস জিতে ব্যাট করতে নামা লাহোর কালান্দার্স শুরুতেই দেখিয়ে দেয় তারা আজ এসেছে বিধ্বংসী মেজাজে খেলতে। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম মাত্র ২৫ বলে ৫০ রান করেন, স্ট্রাইক রেট ছিল ঠিক ২০০—যা দলকে মোমেন্টাম এনে দেয় শুরুতেই। এরপর শ্রীলঙ্কান অভিজ্ঞ ব্যাটার কুশল পেরেরা ৩৫ বলে ৬১ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৭টি চার ও ২টি বিশাল ছক্কা। তাঁর এই ইনিংস দলের স্কোরবোর্ডকে করে দেয় শক্তপোক্ত।
শেষদিকে ক্যামিও খেলেন ভানুকা রাজাপাকশে ও আসিফ আলী। রাজাপাকশে ১৩ বলে ২২ এবং আসিফ ৭ বলে ১৫ রান যোগ করেন। সবমিলিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে লাহোর কালান্দার্স ৮ উইকেটে সংগ্রহ করে ২০২ রানের বিশাল পুঁজি।
সাকিবের ব্যাটিং বিপর্যয়: এক বলেই শেষ
লাহোর দলে সাকিব আল হাসানকে মূলত বোলার হিসেবেই খেলানো হচ্ছে, সেটির প্রমাণ মিলেছে তাঁর ব্যাটিং অর্ডার দেখেই। একের পর এক উইকেট পতনের পরও তাঁকে নামানো হয়নি। অবশেষে যখন দলটির ছয় উইকেট পড়ে যায়, তখন অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসেন সাকিব।
তবে তার আগেই অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি নেমে গিয়েছিলেন ব্যাট হাতে, যেটি সাকিবের উপর দলের আস্থার সংকটই বুঝিয়ে দেয়। ব্যাট হাতে তিনি যা করলেন তা আরও হতাশাজনক। দুই বল খেলে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। পিএসএলের আগের ম্যাচে পেশোয়ার জালমির বিপক্ষেও শূন্য রানেই ফিরেছিলেন।
আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাঁর সর্বশেষ ইনিংস ছিল রানশূন্য। সব মিলিয়ে সাকিব এখন কার্যত শুধুই বোলার হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন, আর লাহোর সেই সিদ্ধান্তেই যেন দৃঢ় হচ্ছে বারবার।
বল হাতেও হতাশাজনক সাকিব
বড় পুঁজি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী লাহোরের বোলাররা শুরু থেকেই চেপে ধরেন ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে। শাহিন আফ্রিদি ও সালমান মির্জার আক্রমণে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে প্রতিপক্ষ। এ সময় আক্রমণে আসেন সাকিব আল হাসান, কিন্তু প্রতিদান দিতে পারেননি।
তাঁর বোলিং ছিল নিস্প্রভ, ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকে ফেরেন। কোনো বৈচিত্র্য বা ভয়ের প্রতিফলন ছিল না তার স্পেলে। এদিকে যখন দলের অন্যান্য বোলাররা একের পর এক উইকেট নিচ্ছেন, তখন সাকিব শুধু রানের খাতা ভারী করে গেছেন।
রিশাদের স্পিন জাদু: ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া বোলিং
একই ম্যাচে যখন সাকিব ব্যর্থ, তখন জ্বলে উঠেছেন রিশাদ হোসেন। ব্যাট হাতে সাকিবের পরে নামা এই তরুণ ২ বলে ৫ রান করলেও তাঁর মূল অবদান আসে বল হাতে। ৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে তুলে নেন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট—সালমান আলী আগা, শাদাব খান ও জিমি নিশাম। এই তিনজনই ছিলেন ইসলামাবাদের ব্যাটিং লাইনআপের মূল স্তম্ভ।
রিশাদের বোলিংয়ে যে নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাস ছিল, তা চোখে পড়ার মতো। তিনি ঠিক সময় মতো উইকেট এনে দিয়ে লাহোরের জয় নিশ্চিত করেন অনেকটাই।
শাহিনের ক্যাপ্টেনস নক: বলেও জ্বলে উঠলেন
লাহোরের অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি ছিলেন ম্যাচের অন্যতম নায়ক। বল হাতে ৩.১ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট, যার মধ্যে ছিল একটি মেইডেন ওভার। তাঁর ভয়ংকর স্পেলেই ইসলামাবাদের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। সালমান মির্জাও তুলে নেন ৩ উইকেট।
ফলে ২০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইসলামাবাদ ইউনাইটেড একসময় ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে মাত্র ৬৮ রানেই। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। ১৫.১ ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৭ রানে।
লাহোর আবার ফাইনালে
এই জয়ের ফলে টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লাহোর কালান্দার্স। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে রোববার, যেখানে শাহিন আফ্রিদির নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাসী লাহোর লড়বে শিরোপার জন্য।
এই ম্যাচে সাকিবের ব্যর্থতা যেমন হতাশাজনক এক চিত্র তুলে ধরেছে, তেমনি রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত বোলিং আশার আলো দেখিয়েছে বাংলাদেশি ক্রিকেটের জন্য। তরুণদের মাঝে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে অভিজ্ঞরাও যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ