
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের ঘরমুখো মানুষের সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে শুরু করেছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। শনিবার (২৪ মে) থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে আজ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে ঈদের আগে চতুর্থ দিনের, অর্থাৎ ৩ জুনের ট্রেনের আসনের টিকিট।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সম্ভাব্য ঈদের দিন ৭ জুন ধরে টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী ঈদের আগের ৭ দিনের ট্রেন টিকিট অগ্রিম বিক্রির ব্যবস্থা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। পুরো প্রক্রিয়াটি এবার শতভাগ অনলাইন-ভিত্তিক। ফলে কাউন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করার পুরোনো ভোগান্তির জায়গা থেকে রেহাই মিলবে যাত্রীদের।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি শুরু হয়, আর দুপুর ২টা থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে পূর্বাঞ্চলগামী ট্রেনগুলোর টিকিট। এই পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চল বিভাজনের মাধ্যমে একসঙ্গে সব ট্রেনের টিকিট না ছাড়ায় সার্ভারের ওপর চাপ কমানো সম্ভব হচ্ছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈদ পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর জন্য এবার প্রতিদিন ৩৩ হাজার ৩১৫টি আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টিকিট নির্ধারিত ওয়েবসাইট (eticket.railway.gov.bd) এবং রেলওয়ের অনুমোদিত মোবাইল অ্যাপে পাওয়া যাবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৪ মে দেওয়া হচ্ছে ৩ জুনের টিকিট। এরপর পর্যায়ক্রমে—২৫ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকিট, ২৬ মে দেওয়া হবে ৫ জুনের টিকিট, এবং ২৭ মে দেওয়া হবে ৬ জুনের টিকিট। অর্থাৎ, ঈদের আগের সাত দিনের ট্রেনযাত্রার টিকিট ধাপে ধাপে অনলাইনে ছাড়া হবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অগ্রিম টিকিট কিনে তা ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। অর্থাৎ, কেউ যদি টিকিট কেটে পরে যাত্রা বাতিল করেন, সে ক্ষেত্রে টিকিট রিফান্ড বা ফেরত পাওয়ার সুযোগ থাকছে না। এটি করা হয়েছে যাতে করে কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে টিকিট রিজার্ভ না করে রাখে, যাতে প্রকৃত যাত্রীদের টিকিট পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
আরও একটি নিয়ম নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ—একজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ চারটি আসনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একদিকে যাতে একসঙ্গে পরিবারের সদস্যরা যাত্রা করতে পারেন, আবার অন্যদিকে কালোবাজারি বা টিকিট মজুতকারীদের প্রতিহত করা যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, “আমরা এবার চেষ্টা করেছি টিকিট ব্যবস্থা সর্বোচ্চ ডিজিটাল ও ব্যবহারবান্ধব করতে। যাত্রীদের জন্য সার্ভার স্থিতিশীল রাখা, অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে একসঙ্গে প্রবেশের চাপ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টিকিট বিক্রির সঙ্গে কোনো প্রকার অনিয়ম যাতে না হয়, সেদিকে আমরা কঠোর নজর রাখছি।”
রেলওয়ের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রেল ভবনে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং সেল, যেখানে সার্বক্ষণিক টিকিট বিক্রির গতি, যাত্রীদের অভিযোগ এবং সার্ভার সমস্যাগুলোর ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের প্রায় সব বড় শহরের আন্তঃনগর রুটেই ট্রেন ছাড়বে। ঈদের আগে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, ঈদের আগের দিনে অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত পর্যায়ে। স্পেশাল ট্রেনগুলো সাধারণ ট্রেনের বাইরে চলবে এবং এসব ট্রেনেরও টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে।
যাত্রীরা যাতে সহজে টিকিট কাটতে পারেন, সেজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে টিকিট কেনার গাইডলাইন, ভিডিও টিউটোরিয়াল ও হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। প্রয়োজনে যাত্রীরা রেলওয়ের কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করে সহায়তা নিতে পারবেন।
যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রেলপথ মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সহযোগিতায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এভাবে এবার ঈদে ট্রেনযাত্রা যতটা সম্ভব ঝামেলামুক্ত করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ, যা অতীতের তুলনায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
তবে ভোগান্তি রোধে সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি বলে মনে করছেন যাত্রীরা। অনেকে বলেছেন, “আমরা চাই সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করুক, যাতে যে টিকিট কাটে সে-ই যাক। দালাল আর কালোবাজারিরা যেন সুযোগ না পায়।”
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, সঠিক তথ্য ও সময় অনুযায়ী প্রস্তুত থাকলে এবার ঈদের ট্রেনযাত্রা হতে পারে স্মরণীয় এবং নির্বিঘ্ন। এজন্য যাত্রীদের সচেতন, ধৈর্যশীল ও প্রযুক্তিবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ