
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির বিস্তার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা একটি বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। একটি ভুল ক্লিকে, একটি ব্যক্তিগত ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়তে পারে অনলাইনে, যার ফলে শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সমাজের গঠনেও ঘটে অস্থিতিশীলতা। ঠিক এমনই এক বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন সাসপেন্স থ্রিলার সিনেমা ‘নীলচক্র’। এই সিনেমার গল্পে উঠে এসেছে একাধিক ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁসের মাধ্যমে মানুষের জীবনে নেমে আসা অন্ধকার ও আতঙ্কের কাহিনী।
সিনেমাটির ট্রেইলার গত ২২ মে রাত ৮টায় প্রকাশ পেয়েছে, যার দৈর্ঘ্য দুই মিনিট ১৯ সেকেন্ড। এই ট্রেইলারে স্পষ্ট দেখানো হয়েছে, কিভাবে একের পর এক ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস হচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এবং সেই ভিডিওর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়, সন্দেহ ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা। ভিডিও ফাঁস হওয়া শুধু ব্যক্তিগত লজ্জার কারণ নয়, বরং এটি পুরো সমাজের ভিত নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ট্রেইলারে দেখা যায়, একটি অদৃশ্য চক্র এই ফাঁসের পেছনে কাজ করছে, যাদের মুখোশ উন্মোচনের দায়িত্ব নিয়েছেন কেউ একজন, যিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান এই ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে।
‘নীলচক্র’ শব্দটি যেন এক গভীর নীল বিষণ্নতার প্রতীক, যা দর্শককে নিয়ে যায় রহস্যের অন্ধকারে, যেখানে প্রতিটি ক্লিকে লুকিয়ে রয়েছে বিপদের আঁচ। সিনেমাটির পরিচালক মিঠু খান এই বিষয়ের গুরুত্ব ও গভীরতা তুলে ধরে বলেন, “আমরা এমন একটি গল্প বলেছি যা রহস্য ও অন্ধকারকে সঙ্গী করে। সিনেমাটি একটি সামাজিক বিপজ্জনক বাস্তবতার প্রতিফলন—যা নিষিদ্ধ কিন্তু অস্বীকারযোগ্য নয়। আমাদের সমাজে ব্লু ফিল্ম র্যাকেটের মতো অপরাধগুলোর অস্তিত্ব গোপন থাকলেও তা সমাজের গায়ে বিষের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলা সিনেমায় এই ধরনের সাহসী ও সময়োপযোগী বিষয়বস্তু খুব কম দেখা গেছে।”
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ ‘নীলচক্র’ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমার ট্রেইলার নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, “একটা ভিডিও বদলে দিচ্ছে জীবনের গতিপথ…।” এ কথায় লুকিয়ে আছে প্রযুক্তির এই যুগে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ভয়াবহ পরিণতি, যা কখনো কখনো একজন মানুষের পুরো জীবনই বদলে দিতে পারে।
‘নীলচক্র’ সিনেমায় আরিফিন শুভ’র সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন মন্দিরা চক্রবর্তী, ফজলুর রহমান বাবু, শিরীন আলম, খালেদা আক্তার কল্পনা, শাহেদ আলী, প্রিয়ন্তী ঊর্বী, মাসুম রেজওয়ান প্রমুখ। মিঠু খানের সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য করেছেন নাজিম উদ দৌলা।
এই ঈদে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘নীলচক্র’ সিনেমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে অনলাইন মাধ্যমের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তিগত ভিডিওর ভয়াবহ প্রভাব এবং তার পেছনের অদৃশ্য অপরাধী চক্রের খোঁজের গল্প তুলে ধরবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। এই সিনেমা সেই সামাজিক সমস্যার ওপর গভীর আলোকপাত করার পাশাপাশি সচেতনতার বার্তাও দেয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে এই রকম অপরাধ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সিনেমাটি শুধু সাসপেন্স থ্রিলারই নয়, বরং এটি একটি সামাজিক আয়না যা আমাদের দেখায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি অবহেলা কিভাবে ব্যক্তির জীবনের পাশাপাশি সমাজেরও ভিত্তি ধ্বংস করে দিতে পারে। এই ঈদে ‘নীলচক্র’ মুক্তি পাওয়ায় দর্শকরা একটি নতুন ধরনের গল্প দেখতে পাবেন যা তাদের প্রযুক্তি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ