
ছবি: সংগৃহীত
আজ শনিবার, ২৪ মে—যা সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে বিবেচিত—তবে আজও দেশের সরকারি-বেসরকারি বহু অফিস ও ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকেই সরকারি অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে অফিস সময়। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোতেও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তটি এসেছে এবারের পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘোষিত ব্যতিক্রমধর্মী দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। সরকার ৫ জুন থেকে শুরু করে ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা ১০ দিনের ছুটি দিচ্ছে, যা বিগত সময়ের তুলনায় একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।
ঈদের ছুটিকে টানা রাখতে এবং মধ্যবর্তী কর্মদিবসগুলোতে কোনো অফিস কার্যক্রম যেন বন্ধ না থাকে, সেজন্যই ১৭ মে ও ২৪ মে—এই দুই শনিবার সরকারি অফিস ও ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়, এসব দিন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং এমনকি কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও চালু থাকবে।
এ বিষয়ে সরকার গত ৭ মে এক উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।
তবে সরকারি অফিস খোলা থাকলেও গত ১৭ মে শনিবারের মতো আজ ২৪ মে'তেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা শৈথিল্য লক্ষ্য করা গেছে। অফিসগুলোতে অন্যান্য দিনের তুলনায় কর্মচারি উপস্থিতি কম, এবং কাজের গতি কিছুটা ধীর। তবুও অফিস খোলা থাকায় প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং ব্যাংকিং সেবাগুলো সচল রয়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী ৭ জুন উদযাপিত হতে পারে। সে অনুযায়ী, সরকার ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে ১০ জুন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ঈদের মূল ছুটি নির্ধারণ করেছে। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এবং কর্মীদের দূর-দূরান্তে যাতায়াতে বাড়তি সময় দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১১ জুন (বুধবার) এবং ১২ জুন (বৃহস্পতিবার) অতিরিক্ত দুই দিনের নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
ফলে সাপ্তাহিক ছুটি (১৩ ও ১৪ জুন) যোগ হয়ে সরকারি চাকরিজীবীরা ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি পাচ্ছেন। এই ব্যতিক্রমী ছুটির কাঠামো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই আজকের মতো দুইটি শনিবার (১৭ ও ২৪ মে) অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিন ব্যাংকগুলোও যথারীতি খোলা রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গ্রাহকেরা তাদের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন। এলসি খোলা, চেক নিষ্পত্তি, নগদ জমা-উত্তোলনসহ সকল ধরনের কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা জারি করেছিল, যাতে ব্যাংকিং কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে এবং ঈদের আগে বিভিন্ন লেনদেন নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন হয়।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশাও রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ছুটির দিনে অফিসে এসে কাজের চাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় সময়ের অপচয় হচ্ছে। তবে অন্যদিকে, দীর্ঘ ঈদ ছুটির সুযোগকে কাজে লাগাতে গিয়ে এই সাময়িক ত্যাগকে বাস্তবসম্মত বলেই মনে করছেন অনেকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “এটা একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। আমরা চাইনি ঈদের আগে-পরের সময়টায় দেশের প্রশাসন ও আর্থিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ুক। তাই বিকল্প দুইটি কর্মদিবসের মাধ্যমে ছুটির ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।”
সরকারি দপ্তর ও ব্যাংকের পাশাপাশি আজ শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কিছুটা কম হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজে পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে।
আজকের দিনটি তাই একদিকে ঈদের দীর্ঘ ছুটির পূর্বপ্রস্তুতির অংশ, অন্যদিকে দেশের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়াস। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ অফিস করছেন এই আশায় যে, সামনে মিলছে একটানা বিশ্রামের সুবর্ণ সুযোগ—যা দেশের কর্মজীবী জনগণের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক এক আয়োজন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ