
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশে আবারও ২০০৭ সালের ‘এক-এগারো’ কায়দায় অঘোষিত সামরিক হস্তক্ষেপ কিংবা অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক রূপান্তরের ষড়যন্ত্র চলছে। এ উদ্দেশ্যে দেশে আবারও রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে দুর্বল করার একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২৩ মে) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিকে সকল প্রকার আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে পরিচালনা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে বারবার বিভাজিত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশকে দুর্বল করে রাখার লক্ষ্যে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আবারো দিল্লি থেকে ছক আঁকা হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার, দেশকে বিভাজিত করার। গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে।”
এই পোস্টে তিনি পরোক্ষভাবে ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বাইরের হস্তক্ষেপে আবারো একটি অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে, যা ২০০৭ সালের মতোই একটি নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, বর্তমান প্রজন্ম ও দেশপ্রেমিক শ্রেণি আর এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি মেনে নেবে না।
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা, দেশপ্রেমিক নাগরিক এবং সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, যেন তারা ঐক্যবদ্ধ থেকে এই অঘোষিত চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকেন। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশপন্থি ও ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব, সংস্কার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার ও সৈনিকদের সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশ রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার ও জনগণের ভোটাধিকারের প্রশ্নে কোনো আপস হবে না। তিনি অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘জুলাই বিপ্লব’ এর প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “ড. ইউনূসকে জনগণকে দেওয়া সংস্কার, বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। উনাকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপের ইঙ্গিত দেন, যার মধ্যে রয়েছে:
জুলাই ঘোষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দিতে হবে
ঘোষিত টাইম ফ্রেম অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে
নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার বিষয়ক ‘জুলাই সনদ’ রচনা করতে হবে
জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে এবং রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে
নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন একসাথে আয়োজন করতে হবে
এর আগে শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডির একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং ‘জাতীয় যুবশক্তি’র সারা দেশের সংগঠকদের নিয়ে আয়োজিত পরিচিতি ও সাধারণ সভায় নাহিদ ইসলাম সরাসরি বলেন, “দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। এর ফাঁদে পা না দিয়ে আমরা বরং ঐক্যবদ্ধ থাকব।”
তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতি ও অস্তিত্ব হচ্ছে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান। জুলাইকে যত বেশি ধারণ করতে পারব, তত বেশি এগিয়ে যেতে পারব। দুঃখজনক হলো অভ্যুত্থানের অংশীদাররা একে ক্ষমতার পালাবদল বলে মনে করছে। যার বিরোধিতা করেছে এনসিপি। আমরা মৌলিক সংস্কার চেয়েছি। কিন্তু তারা জুলাইকে রেজিম চেঞ্জ হিসেবে দেখছে। পুরোনো সংবিধানকে আঁকড়ে ধরে ক্ষমতায় যেতে চাইছে। এখানেই আমাদের আপত্তি। এখন আমাদের দরকার সংগঠিত শক্তি।”
তিনি যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পথে যত বড় শক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াক, আমরা তার মোকাবিলা করব। জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র শহীদ ও আহতদের উপহার হিসেবে দিতে যুবশক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশপ্রেমিক যুবসমাজকেই এগিয়ে এসে দেশকে রক্ষা করতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, বর্তমান সময়ের তরুণ রাজনীতিকরা কেবলমাত্র ক্ষমতার জন্য ব্যাকুল, সংস্কার বা আদর্শ তাদের কাছে মুখ্য নয়। তিনি বলেন, “সবাই যখন রাষ্ট্র সংস্কার চাচ্ছে তখন তরুণ নেতারা ক্ষমতার জন্য কাতর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দেশপ্রেমিক যুবসমাজকে একত্রিত করাই হবে আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। যারা আগামীতে দেশকে রক্ষা করবে। নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্য লড়াই করবে। যুবকদের মধ্যে সেই দেশপ্রেম ও মূল্যবোধ তৈরি করতে যুবশক্তিকে কাজ করতে হবে।”
নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশের রাজনৈতিক ময়দানে নতুন মোড় নিচ্ছে প্রতিবাদ, সংস্কার ও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্ন। এনসিপি এবং তাদের আহ্বায়ক একটি বিকল্প রূপান্তরের ভাষ্য উপস্থাপন করছেন, যার ভিত্তি ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও একটি গণতান্ত্রিক সংস্কারভিত্তিক নতুন প্রজাতন্ত্র গঠনের আহ্বান। তিনি দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন—একটি সম্ভাব্য অঘোষিত চক্রান্তের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ