
ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে যে নতুন গতিপথের সূচনা হয়েছিল, তা এখন এক গভীর বিভ্রান্তি ও বিভাজনের মুখে পড়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম 'জুলাই ঐক্য'। শুক্রবার (২৩ মে) রাত ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এতে তাঁরা অভিযোগ করেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর বদলে রাজনৈতিক দলগুলো উল্টো অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার পথ আরও জটিল করে তুলছে।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন—গণ-আন্দোলনের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন রাজনৈতিক চাপ এবং ষড়যন্ত্রের মুখে পড়তে হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মুখপাত্র মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানাবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। রাজনৈতিক দলগুলো এখন সরকারের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।”
মুসাদ্দেক আলী অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় স্থানে এখনও আগের সরকারের অনুগত ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বসে আছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় প্রক্সি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনও সক্রিয়। এর ফলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিরক্ত হয়ে পদত্যাগের চিন্তা করেছেন। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাই।”
তিনি আরও জানান, আগস্টের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে শক্তির উত্থান ঘটেছিল, সেটিকে দুর্বল করে দিতে এবং বিভাজন সৃষ্টির জন্য নানা রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, “যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো, তখনই কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধামতো প্লাটফর্ম তৈরি করে জুলাই শক্তিকে দুর্বল করতে শুরু করল।”
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়:
১. ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ: ২৫ মে (রবিবার) বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এতে ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় প্রক্সি এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে। জুলাই ঐক্যের নেতারা দেশবাসীকে এই সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
২. জাতীয় ঐক্য গঠনে প্রচারণা: ৩০ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী অনলাইন ও অফলাইনে চলবে ‘জুলাই শক্তি ঐক্য প্রচার অভিযান’। এই প্রচারণার মাধ্যমে সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পথসভা, ক্যাম্পেইন ও গণসংযোগের মাধ্যমে দেশের সকল অঞ্চলে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেবে।
৩. উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তনের দাবি: সংগঠনের মতে, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যেসব সদস্য ভারতীয় স্বার্থে কাজ করছেন বা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে অপসারণ করতে হবে। জুলাই ঐক্য মনে করে, উপদেষ্টা পরিষদে আমূল পরিবর্তন ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার হাত শক্তিশালী হবে না। মুসাদ্দেক আলী বলেন, “যদি আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশে ব্যর্থ হয়, তবে এর দায়ভার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং তাদের সমর্থন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক এবি জুবায়ের, প্লাবন তারিক, ইসরাফিল ফরাজী, আব্দুল্লাহ আল মিনহাজসহ আরও অনেকে। নেতারা বলেন, জাতিকে আর বিভক্ত হতে দেওয়া যাবে না। জুলাই শক্তির ঐক্য ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।
জুলাই ঐক্য জানিয়ে দেয় যে তারা আর কোনো ছলচাতুরি বা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে মেনে নেবে না। জনগণের জাগরণ এবং গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে, আর সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিও নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ