
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিন ধরে প্রতীক্ষিত এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সব ধাঁধাঁ অবশেষে সমাধান হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল, এসিসি) বার্ষিক সভায় ২০২৫ সালের এশিয়া কাপের দিনক্ষণ এবং সূচি চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এসিসির সভাপতি মহসিন নকভি শনিবার (২৬ জুলাই) বিকালে জানিয়ে দেন, এবারের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে আরব আমিরাতে, যেখানে মাঠ মাতাবে এশিয়ার সেরা ৮টি দল। টুর্নামেন্ট শুরু হবে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে এবং শেষ হবে ২৮ সেপ্টেম্বর, মোট ২০ দিনের দৌড়ে খেলা হবে মোট ১৯টি ম্যাচ।
এর আগে এশিয়া কাপ নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল, বিশেষত ফরম্যাট ও আয়োজক সংক্রান্ত বিভিন্ন অস্বচ্ছতার কারণে। কিন্তু ঢাকায় এসিসির সভায় সব বিষয় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এক ধরণের স্বস্তি এসেছে।
২০২৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এবারের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবে মোট ৮ দল।
এই আট দলের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট প্রভু দেশগুলো ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। এছাড়াও রয়েছে আফগানিস্তান, ওমান, নেপাল এবং আয়োজক আরব আমিরাত। এই দলগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে খেলানো হবে।
প্রতিযোগিতার কাঠামো ও ম্যাচ সংখ্যা
টুর্নামেন্টে মোট ১৯টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, যা গ্রুপপর্ব, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল দিয়ে গঠিত।
গ্রুপ পর্ব: দুটি গ্রুপে ভাগ করা ৮ দল নিজেদের মধ্যে লড়াই করবে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল সেমিফাইনালে উঠবে।
সেমিফাইনাল: গ্রুপ টপ দুই দল খেলবে পরবর্তী রাউন্ডে।
ফাইনাল: সেমিফাইনাল থেকে বিজয়ী দুই দল মুখোমুখি হবে শিরোপার লড়াইয়ে।
বাংলাদেশের খেলা ও সূচি
এসিসির সভাপতি মহসিন নকভি এদিন রাত ৮টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ সূচি পোস্ট করেন। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ কোথায় এবং কখন খেলবে, তার বিস্তারিত জানা গেছে।
বাংলাদেশের খেলার প্রধান দিনগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম ম্যাচ: ১০ সেপ্টেম্বর, গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ওমানের সাথে।
অন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ: ১৪ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথ।
পুনরায় মুখোমুখি: ১৮ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে উত্তেজনা চরমে থাকবে।
গ্রুপ ফাইনাল ম্যাচ: ২২ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ম্যাচ আরব আমিরাতের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই উজ্জ্বল বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
বিভিন্ন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশের জন্য কেবল টুর্নামেন্টই নয়, প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সাবেক ক্রিকেটার সাদমান খান বলেন, “টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ একটি বড় পরীক্ষা হবে। নতুন খেলোয়াড়দের জন্য এটি নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ, আর অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জন্য ফর্ম ধরে রাখার জায়গা। আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে নির্ধারিত দিনগুলোতে পারফরম্যান্সটাই হবে মূল কথা।”
অন্যদিকে, ক্রিকেট বিশ্লেষক রাহুল দত্ত বলেন, “এশিয়া কাপের ম্যাচগুলোতে প্রতিটি দল কঠিন লড়াই করবে। ভারতের শক্তি, পাকিস্তানের দক্ষতা, শ্রীলঙ্কার টেকনিক্যাল দক্ষতা এবং আফগানিস্তানের তরুণ তুমুল প্রতিভার মধ্যে উত্তেজনা থাকবেই। বাংলাদেশের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ।”
দেশজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা এই টুর্নামেন্টের জন্য ইতোমধ্যেই উচ্ছ্বসিত। সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ দলকে শুভকামনা জানিয়ে লেখা হচ্ছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা।
ফ্যানরা বলছেন, “আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের ক্রিকেটারদের সাপোর্ট করি যাতে তারা দেশের নামকে উজ্জ্বল করতে পারে। এই এশিয়া কাপ হবে বাংলাদেশের জন্য গৌরবের মুহূর্ত।”
২০২৫ সালের এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট ফ্যানদের জন্য অপেক্ষার শেষ দিন ঘোষণা করেছে।
আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার মঞ্চ হবে। দল যখন নিজেদের সর্বোচ্চ দিক থেকে প্রস্তুত থাকবে, তখন প্রত্যাশিত ভালো ফল আসবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
এই আসর সারা এশিয়ার ক্রিকেটের উত্তেজনা, টেকনিক্যাল কৌশল ও প্রতিভার প্রদর্শনী হবে, যেখানে বাংলাদেশও সমানভাবে অংশগ্রহণ করে জয়গাথা রচনা করবে বলে প্রত্যাশা জাগাচ্ছে।
সবাই মিলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য শুভকামনা রইল এবারের এশিয়া কাপের জন্য, যেখানে ক্রিকেটের মহাতুর্নামেন্টের মহাকাব্য রচিত হবে!
বাংলাবার্তা/এমএইচ