
ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তার আবহ কাটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকার এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসিসি’র সভাপতি মোহসিন নাকভি, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ মোট ২৫ জন প্রতিনিধি। তবে আলোচনার মূল কেন্দ্রে ছিল এশিয়া কাপ ২০২৫ আয়োজন—কোথায় হবে, কবে শুরু হবে, কোন পদ্ধতিতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে অধীর আগ্রহে ছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
সভার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)–এর অংশগ্রহণ। শুরুতে শঙ্কা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তারা অনলাইনে যোগ দেয়। সভায় শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও, জুমে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিসিসিআই। ফলে সভাটি পূর্ণাঙ্গ বৈধতা পায় এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এসিসির সব সদস্য দেশের।
মাত্র দেড় ঘণ্টার এই সাধারণ সভায় যদিও কোনো বড় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে এশিয়া কাপ যে হবে, সে ব্যাপারে প্রাথমিক নিশ্চয়তা মিলেছে। আয়োজক দেশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম ঘোষণা থাকলেও, এখনো ভেন্যু ও সময় চূড়ান্ত হয়নি। এসিসি সভাপতি মোহসিন নাকভি বলেন, “এশিয়া কাপের সূচি দ্রুত ঘোষণা করা হবে। আমরা বিসিসিআইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান করতে পারব।”
অর্থাৎ, মূল সমাধানের দায়িত্ব এখন ভারতের ওপর—তারা চূড়ান্ত ভেন্যু, সময় ও সম্ভাব্য দল চূড়ান্ত করে দিলেই ঘোষিত হবে পূর্ণাঙ্গ সূচি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, এশিয়া কাপ হওয়ার সম্ভাব্য সময় আগামী ১০ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর।
শুরুর ম্যাচগুলো হতে পারে আবুধাবিতে
সমাপ্তি হবে দুবাইয়ে
টুর্নামেন্টে আটটি দল অংশ নেবে, যা হবে ওয়ানডে ফরম্যাটে। তবে সূচি পরিবর্তনের সম্ভাবনাও রয়েছে, বিশেষ করে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য।
এশিয়া কাপ ছাড়াও সভায় আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে:
২০২৫-২৬ সালের জন্য বিস্তৃত টুর্নামেন্ট ক্যালেন্ডার অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসিসির সদস্য দেশগুলোতে ক্রিকেট কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়।
২০২৬ সালের এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
এতে ১০টি পুরুষ দল ও ৮টি মহিলা দল অংশ নেবে
দল বাছাই হবে আইসিসির র্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে
তিনটি নতুন দেশ – মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান ও ফিলিপাইন–কে এসিসির সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এসিসি সভাপতি বলেন, “আমরা টেকসই ক্রিকেট উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবাই মিলে কাজ করলে এশিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল হবে।”
সভায় ভারতের সরাসরি অংশ না নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এসিসি সভাপতি এটিকে স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন। তার ভাষায়, “কিছু দেশ আসতে পারেনি, এটা সাধারণ ঘটনা। আমি নিজেও আইসিসির সভায় সিঙ্গাপুরে যেতে পারিনি। এসিসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, সবাই কোনো না কোনোভাবে অংশ নিয়েছে।”
সভার আয়োজন নিয়ে বিসিবি সভাপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে নাকভি বলেন, “আমিনুল ভাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তার ও বিসিবির আতিথেয়তার জন্য। অসাধারণ দুটি দিন কেটেছে আমাদের।”
সভা শেষে এসিসি নেতারা মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-২০ ম্যাচ দেখতে যান, যা ক্রিকেটীয় সম্পর্কের দৃঢ়তা ও সৌহার্দ্যর প্রতীক বলেই দেখা হচ্ছে।
যদিও চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি, তবে এশিয়া কাপ যে বাতিল হচ্ছে না, সেটি নিশ্চিত। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত ও এসিসি যদি একমত হতে পারে, তাহলে এশিয়া কাপ ২০২৫ হবে নির্ধারিত সময়েই।
তবে এসিসির এই বার্ষিক সভা প্রমাণ করেছে যে, এশিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই একমত—এটি এগিয়ে নিতে হলে ঐক্য, কৌশলগত পরিকল্পনা ও আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা অপরিহার্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ