
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অশ্লীলতা ও আপত্তিকর কনটেন্টের বিস্তার রোধে এক অনিবার্য ও কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোট ২৪টি ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) অ্যাপ ও ওয়েব প্ল্যাটফরমকে দেশব্যাপী নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব প্ল্যাটফরম অহেতুক যৌনতা প্রচার ও অশ্লীল বিষয়বস্তু ছড়িয়ে আইন লঙ্ঘন করেছে, যা ভারতের আইনি কাঠামোর কঠোর পরিসরে অবৈধ।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিষিদ্ধকৃত ২৪টি প্ল্যাটফরমের নাম ঘোষণা করেছে। তালিকায় রয়েছে ‘অল্ট’, ‘উল্লু’, ‘বিগ শটস অ্যাপ’, ‘দেশি ফ্লিক্স’, ‘বুমেক্স’, ‘নবরস লাইট’, ‘গুলাব’ সহ আরও বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপ ও ওয়েবসাইট।
এই প্ল্যাটফরমগুলো ‘সফট পর্ন’ বা মৃদু ধরনের পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেশের আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ও দর্শকদের থেকে সরিয়ে নিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০০-এর ধারা ৬৭ এবং ৬৭এ স্পষ্টভাবে অনলাইনে বৈদ্যুতিক মাধ্যমে অশ্লীল বা যৌন উত্তেজক কনটেন্ট প্রচার নিষিদ্ধ করে। এর পাশাপাশি ১৯৮৬ সালের ‘অশ্লীলভাবে নারী শরীর প্রদর্শন (নিষেধ) আইন’ এবং ২০২৩-এর ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ২৯৪ অনুযায়ী এমন কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার কঠোর অপরাধ।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বলছে, নিষিদ্ধকৃত প্ল্যাটফরমগুলো এসব আইনের জোরালো লঙ্ঘন করেছে। বিশেষ করে নারীকে অবমাননাকর ও অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে সমাজে অবাঞ্ছিত প্রভাব বিস্তার করেছে যা গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আইন লঙ্ঘনের জন্য দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এসব অ্যাপ ও ওয়েব প্ল্যাটফরমের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তাদের কাছে উপযুক্ত ব্যাখ্যা ও সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছে। তবে প্ল্যাটফরমগুলোতে যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ কনটেন্ট সরানো না হয় বা নিয়ম মেনে চলা না হয়, তাহলে দেশব্যাপী এই অ্যাপগুলো ব্লক বা নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া ভারতে অবৈধ কনটেন্ট সরবরাহ বন্ধে সংশ্লিষ্ট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে এই নিষিদ্ধ প্ল্যাটফরমগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মত সংরক্ষিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের দেশে এমন পদক্ষেপ অপরিহার্য। বহুল আলোচিত ওটিটি প্ল্যাটফরমগুলোর মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্টের দ্রুত বিস্তার সমাজে নানা প্রকার নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যুবসমাজের মধ্যে অসৎ অভ্যাস গড়ে ওঠা, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সমাজ ও পরিবারের সংহতি রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারত সরকার শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্যেই থেমে থাকবে না, পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালানোর পরিকল্পনাও করছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি ও সাইবার আইন বিষয়ে সাধারণ জনগণকে জানানো হবে যাতে অনলাইনে নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা চাই ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মাধ্যম সমাজের ইতিবাচক বিকাশে ব্যবহার হোক, অশ্লীলতা ও অশোভন বিষয়াবলী যাতে সমাজে বিস্তার না পায় তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।”
ভারতের এই সিদ্ধান্ত ডিজিটাল মিডিয়া ও অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে একটি দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন। একই সাথে এটি বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে যতটা সম্ভব নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই বর্তমান যুগের বড় চ্যালেঞ্জ, যেখানে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ