
ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েকদিন ধরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত এলাকায় তীব্র সামরিক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাতের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক লড়াই চালাচ্ছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ভারী অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ যে, সীমান্তবর্তী এলাকা পুরোপুরি অস্থির হয়ে উঠেছে।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, চং বক এলাকায় তাদের সঙ্গে কম্বোডিয়ার সেনাদের মধ্যে ভারী কামানের গোলাবর্ষণ বিনিময় হয়েছে। এই গোলাবর্ষণে চং আন মা অঞ্চলের একটি ঘোড়ার ভাস্কর্যসহ আশপাশের কয়েকটি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পাশাপাশি চামটা এলাকায় থাই বাহিনী পাল্টা হামলার জন্য ইনফ্যান্ট্রি ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে এবং দ্রুত ওই এলাকা পুনরুদ্ধারে কাজ করছে।
চং তা থাও এলাকায় কম্বোডিয়া ১৫টি ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে সেখানে থেকে গোলাবর্ষণ চালিয়েছে বলে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে। আর খাও ফ্রা উইহান অঞ্চলে থাই বাহিনী শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়েছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
ফু মাকুয়া পাহাড় এলাকায় নিয়মিত আর্টিলারি গোলাবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটছে। দুই পক্ষই কৌশলগতভাবে শক্ত অবস্থানে অবস্থান করছে এবং একাধিক জায়গায় পাল্টা হামলা-প্রতিহামলার ঘটনা ঘটেছে।
উত্তেজনার কারণে থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী আটটি বিভাগে সামরিক আইন জারি করেছে এবং গ্রামবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে, ফলে সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে এবং দশ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে পালিয়েছে। সীমান্ত এলাকা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘে জানিয়েছেন, তাদের দেশ নিঃশর্তভাবে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। অপরদিকে থাইল্যান্ড এখনো কম্বোডিয়ার প্রস্তাবে কোনো সাড়া দেয়নি।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই শুক্রবার বলেন, “এই সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সীমান্তের ১২টি স্থানে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে।” থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকায় গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছে, আর কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে, যা বিশ্বে নিষিদ্ধ।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান প্রস্তাব করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব নেতারা দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলেছে।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই সংঘাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। তবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ ও আহ্বানের মুখে দুই দেশকেই আলোচনার টেবিলে বসতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে চলমান এই সংঘর্ষ অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা ও মানবিক পরিস্থিতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবিলম্বে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এই সহিংসতা দ্রুত বন্ধ হয় এবং সেখানকার সাধারণ মানুষ নিরাপদে তাদের জীবন যাপন করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ