
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩১ জন নতুন রোগী। রোগীর চাপ বাড়ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও। এ নিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আরও তিনজন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের বাসিন্দা হলেও রাজধানী ঢাকাতেও আক্রান্তের হার ক্রমেই বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, নতুন রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগে—১৩২ জন। এরপর ঢাকা বিভাগে (ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪৭ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ জন, খুলনা বিভাগে ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর (২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী) দেশে মোট ১৭ হাজার ৬৯৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৫ জনের। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিদিনই গড়ে শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত মৃত্যুও ঘটছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক গুরুতর সংকেত।
তুলনামূলকভাবে গত বছরের (২০২৩ সাল) পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ ছিল। সেই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের—যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু মৃত্যুর রেকর্ড। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের মৃত্যুর হার কিছুটা কম হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আবারও পরিস্থিতি ২০২৩ সালের মতো ভয়াবহ হতে পারে। তাদের মতে, মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনগুলোর উদ্যোগ এখনও অপ্রতুল।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, মশা নিধনে ব্যবহৃত ওষুধ যথাযথভাবে ছিটানো হচ্ছে না, ডোবা-নালা ও নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে জমে থাকা পানিতে লার্ভা ধ্বংসে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অনেকে বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় না করায় এবং স্থানীয় পর্যায়ে তদারকির অভাবে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। মানুষকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে। ঘরের ভেতর ও আশপাশে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ফুলদানি, ফ্রিজের ট্রে, এসির ড্রেন, ছাদ ও বাগানের পাত্রে যাতে পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি মশারি ব্যবহার, মশা নিধনের স্প্রে ও কয়েল ব্যবহারেও গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সব হাসপাতালকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে আলাদা ওয়ার্ড, পর্যাপ্ত বেড এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষভাবে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যদিও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল, তবে বর্ষা মৌসুমের আগমনে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হলে এখনই মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজন সম্মিলিত জনসচেতনতা ও কার্যকর স্থানীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ