
ছবি: সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪টি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে নতুন কৌশল নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বছর জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের পর সরকারের পতনের কারণে এসব গাড়ি খালাস হওয়ার আগেই পড়ে ছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। এরপর এসব গাড়ি নিলামে তোলা হলে মূল্যের চেয়ে অনেক কম দর পাওয়া যায়, যা নিয়ে সন্দেহ হয় সিন্ডিকেট থাকার কথা। সেই কারণে নিলাম স্থগিত করে এখন বিক্রির জন্য নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান শুক্রবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রথম দফায় ২৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছিল। ১০ কোটি টাকার মূল্যমানের গাড়িগুলো নিলামে মাত্র ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় দর পড়ে, যা সরকারের জন্য সন্তোষজনক ছিল না। তাই এখন গাড়িগুলো বিক্রি করার জন্য কিছু সরকারি সংস্থা থেকে ৬০ শতাংশ মূল্যে কেনার প্রস্তাব আসছে। তবে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমরা জলের দামে গাড়ি বিক্রি করতে রাজি নই।’ মূল্য ঠিক না হলে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে বিকল্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা হবে না, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি আমদানি করেছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর গত বছরের ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়ার ফলে সেই সুবিধা বাতিল হয়। ফলে এসব গাড়ি ফেলে রেখে পালিয়ে যান সংসদ সদস্যরা। মোট ৪২টি গাড়ির মধ্যে প্রথম দফায় ২৪টি নিলামে তোলা হয়। তবে নিলামের দর সন্তোষজনক না হওয়ায় বিক্রি করা হয়নি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ হাজার কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়ে আছে। এগুলো দ্রুত নিলামে তুলে বন্দরের জট কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম একটি নিলাম সফল হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ভবন পুরোনো হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী আগস্টে সরকারি আদেশ আসবে। এই সময়ে কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্য আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে স্থান দেয়া হবে।
এনবিআর নতুন মডার্ন টেকনোলজি ও সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যেটি আগামী দুই বছরে বাস্তবায়িত হবে। বর্তমান ব্যবহৃত ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের’ জটিলতা ও সমস্যা কমাতে নতুন সফটওয়্যার আনা হবে যাতে কাজের ব্যাঘাত না ঘটে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রধান স্টেকহোল্ডার সিএন্ডএফ এজেন্টরা বন্দরে পণ্য খালাসে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান সৎ ও ভালো ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করার নির্দেশনা দেন এবং কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যের শতভাগ ডেলিভারি আইসিডি থেকে দেওয়ার দাবি রয়েছে। তবে আইসিডির ক্যাপাসিটি সীমিত হওয়ায় এই কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে আইসিডি মালিকদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের কানেকটিভিটির উন্নতির কথাও উল্লেখ করেছেন, যা দেশের পণ্য পরিবহনে সহায়ক হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামে তিনটি আইকনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে—চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন ভবন, কাস্টম একাডেমির নতুন ভবন এবং আগ্রাবাদে কর ভবন। কাজ শুরু হলে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে পরিচালিত হবে।
সরকারি নীতি ও প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলো দেশের আমদানি-রপ্তানিতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং বন্দর জট কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিলাসবহুল গাড়ির ন্যায্য মূল্যায়ন ও বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি ও অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোলা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ