
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় গণঅভ্যুত্থান, রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসমূহ, বিশেষ করে অবৈধভাবে লুট হওয়া কিংবা সঞ্চিত থাকা আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবে সহিংসতায় গড়ায় না এবং সব নাগরিক নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই অভিযান চলছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১ সদর দপ্তর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন থানায় হামলার মাধ্যমে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছিল সেগুলো কিছুটা উদ্ধার হয়েছে, তবে এখনো অনেকে এসব অবৈধ অস্ত্র নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই দেশে যেসব অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই কাজে কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে সবাইকে সহিংসতা পরিহার করে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কিত বিষয়, অর্থাৎ ভারত থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত এক মাসে প্রায় ১,৫০০ বাংলাদেশি নাগরিককে ভারত থেকে পুশইন করা হয়েছে। এটা সত্য তথ্য। যারা আমাদের নাগরিক, তারা যত বছর আগেই ভারতে গিয়েই থাকুক না কেন, আমাদের দায়িত্ব তাদের ফিরিয়ে নেওয়া।”
তবে রোহিঙ্গাদের পুশইনের প্রসঙ্গে ভিন্ন অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি, রোহিঙ্গা পুশইন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত সরকার যদি আমাদের নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুযায়ী, যাচাই-বাছাই শেষে পাঠাতে হবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, তাদের নদীর পাড়ে কিংবা জঙ্গলের ভেতর ফেলে যাচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিপন্থী। আমরা কূটনৈতিকভাবে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তাতে কিছুটা ফলও পাওয়া যাচ্ছে।”
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আলোচিত ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা এই ঘটনায় চারজনকে শনাক্ত করেছি। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার ও ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত টিম নিরলসভাবে কাজ করছে এবং আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, কোনো অপরাধীই পার পাবে না। এমনকি তদন্তে কেউ অবহেলা করলে তাকেও জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে।”
নির্বাচন সামনে রেখে সাংবাদিকদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সাংবাদিকরা যদি সত্য তথ্য তুলে ধরেন, তাহলে দেশজুড়ে বিভ্রান্তি কমে যাবে। আমরা চাই গণমাধ্যম নিরপেক্ষভাবে কাজ করুক এবং তথ্যের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরুক। একমাত্র স্বচ্ছতা ও সত্যের পথেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রচারণা চালাবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে নিরাপত্তা রক্ষা, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের, এবং আমরা সেই দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করবো।”
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “অনেক মামলার তদন্ত অনেকদূর এগিয়েছে। তবে কিছু মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বেশি সংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়েছে, যার ফলে সেসব মামলার তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে।”
তিনি আশ্বস্ত করেন, “আমরা চেষ্টা করছি, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরকালে তার সঙ্গে ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার প্রত্যুষ মজুমদার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ