
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুধু কাঠামোগত ভাগ করলেই কর ব্যবস্থায় বিদ্যমান সমস্যা সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং করদাতাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করাও জরুরি। শুধু সাংগঠনিক বিভাজন করলেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হবে না—এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)-এ ‘কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। আয়োজনটি করে ইউনিভার্সেল কলেজ বাংলাদেশ (ইউসিবি) ও ইউএনডিপি'র ইয়ুথ পলিসি ফোরাম। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের সময় এখনই, এবং তরুণ প্রজন্মকে এই পরিবর্তনের অংশ হতে হবে।
আবদুর রহমান খান বলেন, বর্তমানে এনবিআর যে অডিট পদ্ধতি অনুসরণ করে, তা অনেক সময় করদাতাদের মধ্যে আতঙ্ক বা অনিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এতে করে কর দেওয়ার মানসিকতা বাধাগ্রস্ত হয়। অথচ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অডিট প্রক্রিয়া হলে তা হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং করদাতাবান্ধব। এ জন্য এনবিআর অটোমেশন, ডেটা বিশ্লেষণ এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের মতো নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করতে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের করদাতাদের মধ্যে কর দেওয়ার আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জটিলতা কর দিতে নিরুৎসাহিত করে। কর ব্যবস্থাকে মানুষকেন্দ্রিক ও প্রাযুক্তিক করতে হবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, দেশের কর শিক্ষার চিত্র খুবই দুর্বল এবং এটি উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। উন্নত দেশগুলোতে স্কুল-কলেজ থেকেই কর সচেতনতা গড়ে তোলা হয়, অথচ বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রায় কোনো শিক্ষা নেই। তিনি বলেন, “আমরা এনবিআরের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি যেন কর শিক্ষা পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা যায়। তরুণদের মধ্যে কর বিষয়ে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হলে শিক্ষাক্ষেত্র থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী প্রজন্ম করকে কোনো ধরনের ভয় নয়, বরং নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে দেখবে। এ জন্য বিদ্যালয় পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষায় কর সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি।
সম্প্রতি এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে আয়কর, শুল্ক ও মূসক বিভাগকে তিনটি স্বতন্ত্র সংস্থায় ভাগ করার বিষয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “হ্যাঁ, এনবিআরকে ভাগ করার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু শুধু ভাগ করলেই হবে না। বরং কার্যকর সংস্কার আনতে হলে কাঠামোগত ভাগের পাশাপাশি দক্ষ জনবল, নিরপেক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে কাঠামো পরিবর্তন করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।”
তিনি এ সময় কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে পলিসি ও অপারেশনাল দিক আলাদা করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
আবদুর রহমান খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কর বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “কর সংস্কার শুধু প্রশাসনের কাজ নয়, এটা সমাজের প্রতিটি অংশের, বিশেষ করে তরুণদের সম্পৃক্ততায় সফল হতে পারে। কারণ আজকের শিক্ষার্থীই আগামী দিনের করদাতা এবং নেতৃত্ব।”
ছায়া সংসদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন এবং কর সংস্কার নিয়ে প্রস্তাব ও মতামত দেন। দিনব্যাপী আয়োজনে কর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা, প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার খসড়া উপস্থাপন করা হয়।
সরকার যে করজাল সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে শিক্ষিত তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কর প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক সহায়ক হতে পারে বলেও মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ