
ছবি: সংগৃহীত
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ও তৃতীয় ম্যাচ। সিরিজ ইতোমধ্যে ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করে রেখেছে বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচ জিতে সিরিজকে হোয়াইটওয়াশে রূপ দেওয়ার হাতছানি লিটন দাসদের সামনে। শুধু একটি জয় নয়—এটি হবে একপ্রকার ঐতিহাসিক প্রতিশোধ, যা দীর্ঘ বছর ধরে জমে থাকা হতাশার পাহাড় সরিয়ে নতুন আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার সূচনা ঘটাবে।
একইসঙ্গে এটি হতে পারে বাংলাদেশের প্রথমবার পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করার রেকর্ড, যা হবে ক্রিকেট ইতিহাসে টাইগারদের একটি নতুন অর্জন।
মিরপুরে যখন সন্ধ্যা ৬টা বাজবে, তখন শুধু একটি ম্যাচ শুরু হবে না—শুরু হবে বহু বছর জমে থাকা প্রতিশোধের গল্পের ক্লাইম্যাক্স। পাকিস্তান, যে দলটির বিপক্ষে গত এক দশকে বাংলাদেশের রেকর্ড ছিল হতাশাজনক, সেই দলের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ করার দ্বারপ্রান্তে এখন টাইগাররা।
গত মে মাসে লাহোরে সফর করে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। সেই হোয়াইটওয়াশের যন্ত্রণা এখনও লিটন-সাকিবদের স্মৃতিতে তাজা। এবার সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে, নিজেদের পরিচিত কন্ডিশনে দাঁড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চূড়ান্ত সুযোগ মিলেছে বাংলাদেশের।
প্রথম দুই ম্যাচেই পাকিস্তানকে ব্যাটে-বলে পেছনে ফেলে জয়ের হাসি হেসেছে টাইগাররা। এখন সিরিজের শেষ ম্যাচটিকে রূপ দেওয়া যেতে পারে এক ঐতিহাসিক ঘোষণায়—‘হোয়াইটওয়াশের বদলা হোয়াইটওয়াশে’।
আজকের ম্যাচটি শুধুই একটি ফরমালিটি নয়, এটি একটি প্রতীকি যুদ্ধও বটে। একদিকে পাকিস্তান নামবে সম্মান রক্ষায়, অন্যদিকে বাংলাদেশ লড়বে ইতিহাস গড়ার এবং বহু বছরের হতাশা মুছে নতুন অধ্যায় রচনার লক্ষ্যে।
টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে বরাবরই বাংলাদেশ ছিল একপ্রকার পিছিয়ে থাকা দল। ২০০৯ সালে প্রথমবার এই ফরম্যাটে মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে টানা হার ছিল বাংলাদেশের সঙ্গী। ২০১6 সালে এশিয়া কাপে একটিবার কেবল হারাতে পেরেছিল পাকিস্তানকে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিটি সিরিজে পাকিস্তানের আগ্রাসন এবং বাংলাদেশের পিছু হটা দেখা গেছে। গত নয় বছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র দুটি ম্যাচ ছাড়া কোনো জয় ছিল না টাইগারদের ঝুলিতে।
কিন্তু সময় বদলেছে। মাঠের পারফরম্যান্সে এসেছে আত্মবিশ্বাস, নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা পেয়েছে ধারাবাহিকতা। লিটন দাসের নেতৃত্বে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং—সব বিভাগেই দেখানো হচ্ছে একীভূত দলগত পারফরম্যান্সের ছাপ। বিশেষ করে স্পিন আক্রমণে পাকিস্তানি ব্যাটারদের বারবার বিপদে ফেলেছে টাইগাররা।
এই ম্যাচটি জিতলে শুধু সিরিজ জয়ের আনন্দেই আটকে থাকবে না বাংলাদেশ। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়েও উন্নতি ঘটবে টাইগারদের। সিরিজের আগে যেখানে পাকিস্তান ছিল বেশ এগিয়ে, এখন সেটি ঘুচিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিটি ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে র্যাংকিং পয়েন্ট বেড়ে চলেছে, যা বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস সঞ্চারের বড় মাধ্যম।
বাংলাদেশ যদি ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতে পারে, তাহলে আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের আগে তারা হয়ে উঠবে এক ভয়ংকর প্রতিপক্ষ। বিশেষ করে যেসব দল উপমহাদেশের বাইরের, তাদের কাছে স্পিন-ভিত্তিক এমন ক্রিকেট দল রীতিমতো ভয়ের নাম হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পাকিস্তানের জন্য আজকের ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছে মর্যাদা রক্ষার লড়াই। সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় তাদের সামনে হারানোর কিছু নেই, কিন্তু প্রমাণ করার আছে অনেক কিছু। দলে অভিজ্ঞ ব্যাটার বাবর আজম, উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অলরাউন্ডার শাদাব খানের মতো তারকারা রয়েছেন, যারা নিজেদের দিনে যেকোনো দলের বিপক্ষে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
তবে এখন পর্যন্ত ব্যাটিং লাইনআপের ব্যর্থতা এবং বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে বাংলাদেশ দাপট দেখিয়ে আসছে। আজ যদি পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে অন্তত হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারবে। কিন্তু টাইগারদের আগ্রাসী ক্রিকেট যেভাবে তাদের জড়িয়ে ধরেছে, তাতে সহজে জয় তুলে নেওয়া যে সম্ভব নয়, সেটিও মানছে ক্রীড়া বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিরিজে বাংলাদেশ নিজেদের নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছে। সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, “এই ম্যাচটা শুধু একটি ম্যাচ নয়, এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি ‘স্টেটমেন্ট’। পাকিস্তানকে ৩-০ তে হারানো মানে, আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি নতুন বার্তা পাঠাচ্ছেন।”
বিসিবির সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, “এই দলের মধ্যে যে আগ্রাসন ও ঐক্য দেখা যাচ্ছে, তা যদি ধরে রাখা যায়, তাহলে সামনে আরও অনেক রেকর্ড ভাঙবে বাংলাদেশ।”
সব মিলিয়ে আজ মিরপুরের মাঠে নামবে না কেবল দুইটি ক্রিকেট দল, বরং নামবে ইতিহাস, সম্মান, প্রতিশোধ ও ভবিষ্যতের জন্য এক সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। টাইগাররা কি পারবে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে হোয়াইটওয়াশের বদলা নিতে? রাত ১০টার পরেই মিলবে সেই উত্তরের। তবে যতটুকু এখন পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের আরেকটি সোনালি অধ্যায়ের সূচনার একদম দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে লিটনরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ