
ছবি: সংগৃহীত
দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, বরং দেশের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করাই তার জীবনের শেষপ্রান্তে পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তিনি বলেন, এ দায়িত্ব পালনে তিনি দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন, কারণ এমন দায়িত্ব একা কারো পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে খুলনায় যাওয়ার পথে যশোরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেন সিইসি নাসির উদ্দীন। এ সময় তিনি যশোর কালেক্টরেট মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং নামাজ পূর্ব সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। তার এই বক্তব্য ছিল অনাড়ম্বর, তবে গভীর বার্তা বহনকারী—যেখানে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিজের অবস্থান, দায়িত্ব এবং লক্ষ্যের কথা অকপটে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ সরকারি চাকরি জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। কিন্তু বর্তমানে যে দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছে—তা শুধু আমার চাকরি জীবনের নয়, বরং দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারি। এটাই এখন আমার প্রধান লক্ষ্য।”
সিইসি নাসির উদ্দীন আরও বলেন, “জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আমি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছি। এটি আমার জন্য সম্মানের হলেও একই সঙ্গে অত্যন্ত জবাবদিহিমূলক ও কষ্টসাধ্য একটি দায়িত্ব। আমি একা নই, এ দায়িত্ব পালনে আমাকে সহায়তা করতে হবে আমাদের নির্বাচন কমিশনকে, প্রশাসনকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এবং সর্বোপরি দেশের জনগণকে। জনগণের সহযোগিতা, সচেতনতা এবং আস্থা ছাড়া কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারে না।”
এ সময় তিনি দেশের সাম্প্রতিক একটি বড় দুর্ঘটনার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় অনুষ্ঠিত বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনার জন্য আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় আমি সবার কাছে দোয়া চাইছি।”
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনার রেশ এখনও দেশের মানুষ অনুভব করছে।
সিইসির যশোর সফরের সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাহারুল ইসলাম, স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। মসজিদে সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলেন তিনি এবং তাদের কাছ থেকে দোয়া চান।
এর আগে তিনি একাধিকবার গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য হলো এমন একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে এবং দেশের জনগণ তাদের মত প্রকাশে স্বাধীন হবে। এ লক্ষ্যে কমিশন প্রশাসনিক সংস্কার, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধির মতো নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সিইসির বক্তব্য এমন সময় এল, যখন দেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করা এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিইসি যদি সত্যিই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সফল হন, তবে সেটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় অর্জন হবে। তবে, এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে শুধু ভাষণে নয়, বাস্তব পদক্ষেপ ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনায়ও দৃঢ়তা দেখাতে হবে।
সার্বিকভাবে, সিইসি নাসির উদ্দীনের যশোরের এই সফর এবং বক্তব্য দেশের আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—যেখানে তিনি নিজের অঙ্গীকার স্পষ্ট করেছেন, এবং জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য দায়িত্ববান অবস্থান দেখিয়েছেন। এখন দেখা যাক, তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন কতটা কার্যকর ও নিরপেক্ষ থেকে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ