
ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিদায় জানাতে কিংবা অভ্যর্থনা জানাতে আসা সঙ্গীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের নির্বিঘ্ন চলাচল, যানজট হ্রাস এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ২৭ জুলাই, রবিবার থেকে নতুন এই নিয়ম কার্যকর করা হবে। এর আওতায় এখন থেকে প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন সঙ্গী বিমানবন্দরের নির্ধারিত এলাকাগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, একজন যাত্রীকে বিদায় বা অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্থান (Departure Driveway) বা আগমন (Arrival Canopy) এলাকায় যে কেউ ইচ্ছা করলেই প্রবেশ করতে পারবেন না। সুনির্দিষ্টভাবে সর্বোচ্চ দুজন ব্যক্তিকে এই সুযোগ দেওয়া হবে। অতিরিক্ত কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যাত্রী ও সঙ্গীদের প্রতি আহ্বান
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধুমাত্র জনসমাগম কমিয়ে যাত্রী চলাচলকে সহজ করা নয়, বরং নিরাপত্তার বিষয়টিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে যেভাবে বিমানবন্দর নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, বাংলাদেশও সেই ধারা অনুসরণ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিমানবন্দরে অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড়, যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তা যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় এতে যাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতেই বিমানবন্দরে আগত সঙ্গীদের সংখ্যা সীমিত করার এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া নজরদারি
নতুন নিয়মের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর এলাকায় বাড়ানো হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। প্রবেশপথে নজরদারি বাড়ানো হবে এবং সন্দেহজনক কাউকে চিহ্নিত করতে বাড়ানো হবে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মনিটরিং। বিমানবন্দর এলাকায় নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীদেরও এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় এড়াতে প্রয়োজনে স্পিকার ও ডিজিটাল সাইনেজ ব্যবহারের মাধ্যমে জনসাধারণকে নিয়ম স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্দেশনাটি সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত থাকে, সেজন্য প্রচার কার্যক্রমও চালানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার নতুন ধারা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ কেবল জনসমাগম কমাতে নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, সময়োপযোগী এবং যাত্রীবান্ধব বিমানবন্দর পরিচালনার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, বড় যাত্রীর ভিড়ের সময় প্রিয়জনদের ভিড়ে অনেক যাত্রীর জন্য বিমানবন্দর এলাকা একপ্রকার দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এমনকি প্রস্থান ক্যানোপি এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, যা বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখেও ফেলে দেয়।
অতএব, দেশি-বিদেশি যাত্রীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এবং বিমানবন্দরের সার্বিক পরিবেশ শৃঙ্খলিত রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট মহল।
সহযোগিতার আহ্বান
সবশেষে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রী, সঙ্গী এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, নতুন নির্দেশনা মেনে চলতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে। বিমানবন্দর কেবল একটি যাত্রা শুরুর বা শেষের স্থান নয়, বরং দেশের গেটওয়ে – যেখানে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যই দেশের ভাবমূর্তিকে তুলে ধরে।
সেই ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত, যা কার্যকর হলে একদিকে যাত্রীদের যাতায়াত স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে, অন্যদিকে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনাও আরো উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ