
ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (KLIA) আবারও অভিবাসী জটিলতার মুখে পড়লেন বহু বাংলাদেশিসহ শতাধিক বিদেশি। প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এদেরকে দেশটিতে প্রবেশ করতে না দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এবারের অভিযানে মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মোট ১৯৮ জন বিদেশিকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠিয়েছে, যাদের মধ্যে ১২৩ জনই বাংলাদেশি।
মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (Agensi Kawalan Sempadan Malaysia বা AKSEM)-এর মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোহাম্মদ শুহাইলি মোহাম্মদ জেইন শুক্রবার (২৪ জুলাই) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামা-কে জানান, কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১ ও ২ থেকে আটক বিদেশিদের বিরুদ্ধে ‘Not to Land’ (NTL) পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নীতিমালার আওতায় কোনো যাত্রী যদি মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পূর্বশর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে বিমানবন্দর থেকেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়, এবং এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাকেই নিতে হয়।
বারনামার প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার একদিনেই KLIA টার্মিনাল ১ থেকে মোট ১২৮ জন বিদেশিকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন: ১২৩ জন বাংলাদেশি, ২ জন পাকিস্তানি, ২ জন ইন্দোনেশিয়ান, ১ জন সিরিয়ান।
অন্যদিকে, টার্মিনাল ২ থেকে আটক আরও ৭০ জন বিদেশির মধ্যে ছিলেন: ৫১ জন ইন্দোনেশিয়ান, ১৩ জন ভারতীয়, ৪ জন পাকিস্তানি, ২ জন ভিয়েতনামি।
এই ঘটনায় শুধু বাংলাদেশি নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিবাসী নাগরিকরাও মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তবে সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশিরাই সবচেয়ে বেশি।
এটি প্রথম নয়। গত ১১ জুলাই-তেও প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতে ৯৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। অর্থাৎ, চলতি জুলাই মাসেই কমপক্ষে ২১৯ জন বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়া ফেরত পাঠিয়েছে, যা দেশটির অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং নজরদারির আওতা বেড়ে যাওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মহাপরিচালক মোহাম্মদ শুহাইলি তার বক্তব্যে আরও বলেন, মালয়েশিয়াকে যেন অবৈধ অভিবাসনের জন্য ‘ট্রানজিট হাব’ হিসেবে ব্যবহার করা না যায়, সেজন্য অভিযান এবং নজরদারি আগের চেয়েও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর এলাকা এবং প্রবেশবিন্দুগুলোতে ইমিগ্রেশন চেকিং ও ইন্টেলিজেন্স তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেসব যাত্রীদের ভিসা, রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং, যথাযথ কাজের অনুমতি বা আমন্ত্রণপত্র নেই — তাদের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া এখন শূন্য সহনশীলতা দেখাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই কর্মসংস্থানের আশায় বা ঘুরতে গিয়ে সঠিক কাগজপত্র ছাড়াই মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন। আবার এজেন্টদের প্রতারণার কারণেও অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে বিমানযাত্রায় ওঠেন, যার ফল হয় বিমানবন্দরে আটকে পড়া।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে ভিসা যাচাই, বৈধ কর্মসংস্থান ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট যাচাই না করে কাউকে বিদেশে পাঠানো ঠেকাতে সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমবাজারের অন্যতম বড় অংশীদার মালয়েশিয়া। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে নানা শর্ত, কোটা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বৈধ অভিবাসনব্যবস্থা জটিল হয়ে উঠেছে। নতুন করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ আবারও চালু হলেও, বাস্তবে বহু শ্রমিক নানা জটিলতায় পড়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে, অভিবাসন সংস্থাগুলোর নজরদারি, দূতাবাসের প্রস্তুতি, এবং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের উচিত অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে এই ইস্যুতে স্পষ্ট ও মানবিক সমাধানে পৌঁছানো — যেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা আর এই রকম অমানবিক পরিস্থিতির শিকার না হন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ