
ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ধারা ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত হলে কেবল মানুষের অধিকার নয়, প্রাণীকূলের নিরাপত্তা ও বাস্তুতন্ত্রও সুরক্ষিত থাকবে—এমন এক অভিমত প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার রাজধানীর চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ‘প্রাণী ও প্রাণের মিলন মেলা’য় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি দীর্ঘ সময় প্রাণী অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করেন। দিনব্যাপী এই অনন্য আয়োজনে পশু-পাখি প্রেমীদের অংশগ্রহণে প্রায় ৪০ প্রজাতির পশু-পাখি প্রদর্শিত হয়।
তারেক রহমান বলেন, “মানুষের অধিকার রক্ষায় যেমন গণতন্ত্রের চর্চা অপরিহার্য, তেমনি প্রাণীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাস্তুতন্ত্র রক্ষা জরুরি। বন্যপ্রাণীরা নিজের আবাসস্থল নিজেরাই তৈরি করে, কিন্তু সেই আবাস ধ্বংস হলে মানুষের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রাণীকুলের নিরাপত্তা শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা এবং মানবজাতির টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে অপরিহার্য। পবিত্র কুরআনে বহু প্রাণীর নামে সূরা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আল্লাহ পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণীকে একেকটি জাতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রাণীকুল প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানব সভ্যতার উন্নয়নের অংশ।”
তারেক রহমান উদাহরণ টেনে বলেন, “ডেঙ্গুর মতো প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার রোধে ব্যাঙ অপরিহার্য। কিন্তু শহরে ব্যাঙের আবাসস্থল নেই। জলাশয় ভরাট ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায়ও প্রাণীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘের (IUCN) এক দশক পুরোনো রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১,৬০০ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৩৯০ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “আশির দশকে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। সর্বশেষ জরিপে সেটি নেমে এসেছে শতকের কোটায়। হাতির সংখ্যাও কমে ২০০-এর নিচে চলে গেছে। এর বাইরে আরও অনেক প্রাণী বিলুপ্তির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বন উজাড়, নদী-জলাভূমি ভরাট এবং বন্য প্রাণী পাচারের কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে শুধু প্রাণীরাই নয়, মানুষের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ছে।
তারেক রহমান বলেন, দেশে প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনসহ অনেক আইন আছে। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হয় না। জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে এসব আইন যুগোপযোগী করার পাশাপাশি অনেক আইন সংশোধন ও পরিবর্তন করা হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি রাজনৈতিক পরিসরে শুদ্ধাচারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “দেড় দশক ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার হারানো মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। আমাদের অঙ্গীকার হোক মনুষ্যত্ব অর্জন এবং পশুত্ব বর্জন।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “প্রকৃতির অলংকার হলো প্রাণীকুল। সবাইকে যার যার জায়গা থেকে তাদের রক্ষায় কাজ করতে হবে।”
যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেন, “শিশুদের জন্য রাজধানীতে পার্ক নেই, মাঠ নেই। তাদের প্রাণের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে। বনভূমি ধ্বংস আর মোবাইল রেডিয়েশনের কারণে প্রাণীরা বিলুপ্ত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্র গড়া জরুরি।”
সাবেক জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক তামিম ইকবাল প্রাণী অধিকারের পক্ষে সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে প্রাণী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হতে হবে।”
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন, বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান রুমন, বিএনপির সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার প্রমুখ।
বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই ‘প্রাণী ও প্রাণের মিলন মেলা’য় সভাপতিত্ব করেন চিত্রনায়ক আদনান আজাদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি, বিএনপি পরিবারের সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ ও লোভা আহমেদ।
মেলায় সকাল ১০টা থেকে প্রাণী প্রদর্শনী এবং বিকাল ৪টা থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘দেশ হোক সকল প্রাণের নিরাপদ আবাসস্থল’ স্লোগানে আয়োজিত এই মিলন মেলা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত প্রাণীপ্রেমীদের মিলনস্থল হয়ে ওঠে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ