
ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের শিক্ষাঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বহু বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লড়াই এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সবার নজর কেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নবনির্বাচিত প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির এই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিবৃতিতে তিনি শুধু বিজয়ীদেরই নয়, বরং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সফল করার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “৯ সেপ্টেম্বর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে, ছাত্রসমাজ গণতান্ত্রিক চর্চায় অভ্যস্ত এবং তারা নিজেদের নেতৃত্ব বেছে নিতে প্রস্তুত।”
তিনি নবনির্বাচিতদের উদ্দেশে বলেন, “যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। আমি আশা করি, তারা দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিকার অর্থে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।”
বিবৃতিতে জামায়াত আমির নির্বাচন আয়োজনকারীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি আন্তর্বর্তী সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি উল্লেখ করেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক চর্চায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। এটি শুধু শিক্ষাঙ্গনের জন্য নয়, জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ডা. শফিকুর রহমান তার বিবৃতিতে নির্বাচন চলাকালে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, “ডাকসুর ভোট চলাকালে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় চ্যানেল এস-এর সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম শিবলী ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত আমিরের এই বিবৃতি কেবল আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন নয়, বরং দেশের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা প্রকাশের ইঙ্গিত। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে বিতর্কিত এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের প্রশংসা করায় অনেকেই একে ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর তারা কেমন ভূমিকা রাখবে—তা নিয়েই এখন আগ্রহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। জামায়াত আমিরও তার বিবৃতিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিজয়ীরা যেন দলীয় স্বার্থ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক স্বার্থে কাজ করেন।
ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি ছাত্রসংসদের নির্বাচন নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভিত্তি গড়ে তোলার অন্যতম ক্ষেত্র। এই নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে, তা প্রমাণ করে এখনও ছাত্ররাজনীতি জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং তার আহ্বান নিঃসন্দেহে নবনির্বাচিতদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। এখন দেখার বিষয়—তারা কতটা সফলভাবে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ