
ছবি: সংগৃহীত
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৭ টাকা বাড়িয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত উচ্চ দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়নি।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং-এর বৈঠকে এ দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হচ্ছে। স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়াকে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর ফলে এখন বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ভরি প্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকায়, যা বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারে একটি নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে।
নতুন ঘোষণায় স্বর্ণের সব ক্যারেটেই দামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
-
২২ ক্যারেট স্বর্ণ (প্রতি ভরি): আগের তুলনায় ৩,১৩৭ টাকা বেড়ে দাম হয়েছে ১,৮৫,৯৪৭ টাকা।
-
২১ ক্যারেট স্বর্ণ (প্রতি ভরি): ২,৯৯৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৭,৫০৩ টাকা।
-
১৮ ক্যারেট স্বর্ণ (প্রতি ভরি): ২,৫৭৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ১,৫২,১৪৫ টাকা।
-
সনাতন স্বর্ণ (প্রতি ভরি): ২,২০৪ টাকা বেড়ে দাম হয়েছে ১,২৬,১৪৬ টাকা।
অপরদিকে, স্বর্ণের দামের বিপরীতে রূপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
-
২২ ক্যারেট রূপা (প্রতি ভরি): ২,৮১১ টাকা।
-
২১ ক্যারেট রূপা (প্রতি ভরি): ২,৬৮৩ টাকা।
-
১৮ ক্যারেট রূপা (প্রতি ভরি): ২,২৯৮ টাকা।
-
সনাতন রূপা (প্রতি ভরি): ১,৭২৬ টাকা।
সোনার দামের উর্ধ্বগতির পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান ও ডলারের দামের বিষয়টিও সমান্তরালে আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি বাজুস জানিয়েছে, তেজাবী সোনার দাম স্থানীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রবাসীরা ৬,২৯৭ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডলারের যোগান বৃদ্ধি পেলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, হঠাৎ দামের উল্লম্ফনে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। যারা বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য স্বর্ণ কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা অনেকেই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের ভিড় কমলেও বড় অংকের ক্রেতারা এখনো বাজারে সক্রিয় আছেন। অন্যদিকে স্বর্ণে বিনিয়োগকারীরা এটিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন, কারণ স্বর্ণ এখন আগের চেয়ে আরও বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, মার্কিন ডলারের অস্থিতিশীলতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ মজুদ বৃদ্ধি বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশও সেই প্রভাব থেকে বাদ যায়নি। আমদানিনির্ভর এ খাতে বৈশ্বিক দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই স্থানীয় বাজারে প্রায় প্রতিদিনই দামে ওঠানামা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের দাম বাড়া একদিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে এটি প্রমাণ করছে বাজারে টাকার অবমূল্যায়ন এবং অনিশ্চয়তা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য এই দামের ঊর্ধ্বগতি বড় ধাক্কা। তবে অন্যদিকে, অনেক বিনিয়োগকারী এটিকে মুনাফার সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
একদিনের ব্যবধানেই আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এই দামে পৌঁছে স্বর্ণ বাজারে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। তবে দামের লাগামছাড়া এই উর্ধ্বগতি কোথায় গিয়ে থামবে—তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। বাজারে স্বর্ণ কেনার পরিকল্পনা যারা করেছেন তাদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—দাম আরও বাড়বে, নাকি কিছুটা কমে আসবে?
বাংলাবার্তা/এমএইচ