
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সহসভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের কর ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। তদন্তে জানা গেছে, তিনি প্রায় ২২ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কর ফাঁকির অভিযোগ স্বীকারও করেছেন এই সাবেক ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী। তবে আংশিক অর্থ—প্রায় ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর বাকি অর্থ আর পরিশোধ না করায় এনবিআরের পক্ষ থেকে তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করে দেওয়া হয়েছে।
আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বর্তমানে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর একটি মামলায় গ্রেফতারের পর থেকেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির তদন্ত শুরু করে।
ব্যাংক হিসাব, আয়কর সংক্রান্ত নথি ও বিভিন্ন আর্থিক কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মুর্শেদী দীর্ঘ সময় ধরে বিপুল পরিমাণ আয়ের সঠিক হিসাব দেননি। তদন্ত শেষে প্রায় ২২ কোটি টাকার কর ফাঁকির প্রমাণ মেলে।
তদন্তকারীরা জানান, অভিযোগ উত্থাপনের পর মুর্শেদী প্রথমে কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। তিনি ২২ কোটি টাকার মধ্যে ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। তবে বাকি অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকার করেও আর কোনো অর্থ জমা দেননি। এরই প্রেক্ষিতে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআরের তদন্ত ইউনিট।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “কর ফাঁকির অর্থ পরিশোধ না করায় এবং একাধিক মামলায় অভিযুক্ত থাকায় তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তার সব আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকবে।”
শুধু সালাম মুর্শেদী নন, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, তার স্ত্রী শারমিন সালাম, ছেলে ইশমাম সালাম এবং মেয়ে শেহরিন সালামের আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের নামে সম্পদ গোপন বা আয়কর ফাঁকির কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া সালাম মুর্শেদীর মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট কর্পোরেট হাউজগুলোর আয়কর নথিও বিশেষ নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী একসময় ছিলেন দেশের তুখোড় ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন এবং দীর্ঘ সময় আবাহনী ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে তিনি ব্যবসা জগতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার নাম বারবার বিতর্কে আসে। দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠতে থাকে। বাফুফের সহসভাপতি থাকা অবস্থাতেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তিনি সমালোচিত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মুর্শেদীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তদন্ত চলছে। এনবিআর ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তার সম্পদ ও লেনদেন খতিয়ে দেখছে। এনবিআর জানিয়েছে, কর ফাঁকির পুরো অর্থ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বড় কর ফাঁকিবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাতে সরকারের রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে তারা মনে করেন, শুধু অর্থনৈতিক শাস্তি নয়, দায়ীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি।
বাংলাবার্তা/এসজে