
ছবি: সংগৃহীত
অনেকের দিন শুরু হয় এক কাপ গরম চা দিয়ে। সকালের তাড়াহুড়ায় অনেকেই খালি পেটে চা খাওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন। কেউ কেউ আবার মনে করেন, খালি পেটে চা খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং কাজের উদ্যম বাড়ে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, খালি পেটে চা পান করা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। বরং এ অভ্যাসে শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে তৈরি হয় নানা জটিলতা, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চায়ে উপস্থিত ক্যাফেইন, ট্যানিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান খালি পেটে গেলে পাকস্থলীর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে। এতে হজম সমস্যা থেকে শুরু করে রক্তশূন্যতা, ডিহাইড্রেশন এমনকি মানসিক অস্থিরতাও দেখা দিতে পারে। নিচে খালি পেটে চা খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—
১. অস্বস্তিকর অ্যাসিডিটি বাড়ায়
চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও ট্যানিন পাকস্থলীতে গিয়ে গ্যাস্ট্রিক এসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। খালি পেটে পাকস্থলীতে অন্য কোনো খাবার না থাকায় এ এসিড সরাসরি আস্তরণে চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে বুক জ্বালা, অম্বল, টক ঢেঁকুর, গলায় জ্বালাপোড়া কিংবা পেটের ভেতরে অস্বস্তির অনুভূতি হতে পারে। নিয়মিত খালি পেটে চা খেলে এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গ্যাস্ট্রিকের ক্রনিক রোগে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
২. আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে
চায়ের ট্যানিন নামক উপাদান শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে এটি খনিজ শোষণে বাধা দেয়। বিশেষ করে খালি পেটে চা পান করলে দেহের আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভ্যাস চালিয়ে গেলে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। গর্ভবতী নারী, কিশোর-কিশোরী কিংবা যাদের শরীরে আগে থেকেই আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের জন্য এ অভ্যাস আরও বিপজ্জনক।
৩. পাকস্থলীতে প্রদাহ ও জ্বালা সৃষ্টি করে
চায়ে উপস্থিত রাসায়নিক উপাদানগুলো খালি পেটে সরাসরি পাকস্থলীর আস্তরণে প্রভাব ফেলে। এতে পাকস্থলীর দেয়ালে প্রদাহ, ক্ষত বা আলসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। প্রথমদিকে সামান্য জ্বালা বা অস্বস্তি দেখা দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বড় ধরনের গ্যাস্ট্রিক আলসারে রূপ নিতে পারে, যা চিকিৎসা ব্যতীত বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তাই খালি পেটে চা পান না করার পরামর্শ দেন।
৪. রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করে
চায়ের ক্যাফেইন শরীরে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করায়। খালি পেটে চা খেলে অনেকের মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা বা হালকা বমি বমি ভাব হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর, কারণ তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ ওঠা-নামা করলে গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৫. ডিহাইড্রেশন ও মাথাব্যথার কারণ
চায়ে থাকা ক্যাফেইন শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়, যা ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়। খালি পেটে চা খেলে শরীরের ভেতরে পানির ঘাটতি দ্রুত দেখা দিতে পারে। এর ফলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, শরীর ভেঙে পড়া এমনকি মনমেজাজ খারাপ হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। যারা দিনে বারবার চা পান করেন কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
চা পান স্বাস্থ্যকর হতে পারে যদি তা সঠিক সময়ে ও সঠিক উপায়ে পান করা হয়। খালি পেটে নয়, বরং সকালের নাশতার পর বা অন্তত একটি বিস্কুট, কলা বা হালকা কিছু খেয়ে চা পান করা নিরাপদ। এ ছাড়া দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা পান না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেই চা থেকে পাওয়া আনন্দকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর না করে উপভোগ করা সম্ভব।
তাই অভ্যাস পরিবর্তন করুন আজ থেকেই। খালি পেটে চা নয়, বরং হালকা খাবারের পর এক কাপ গরম চা উপভোগ করুন। এতে যেমন চায়ের স্বাদ ভালো লাগবে, তেমনি শরীরও থাকবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ