ছবি: সংগৃহীত
আমলকী, বা অম্লকী, হচ্ছে এমন একটি ফল যা স্বাস্থ্যের জন্য একাধিক কারণে অত্যন্ত উপকারী। সাধারণত ছোট, টক স্বাদের এই ফলটি ভেষজগুণে ভরপুর, যার কারণে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও শরীর সুস্থ রাখার জন্য খাওয়া হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিদিন একটি করে আমলকী খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মেজাজ ভালো থাকে, এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে।
আমলকী শুধুমাত্র টক স্বাদের নয়, এটি ভিটামিন ‘সি’-এর অত্যন্ত সমৃদ্ধ উৎস। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে রয়েছে পেয়ারা ও লেবুর চেয়ে ৩ গুণ বেশি, কমলার চেয়ে ১৫–২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি-র কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি, চুল ও দাতের স্বাস্থ্য রক্ষা, এমনকি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত হয়।
এ ছাড়া আমলকীতে আছে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগ, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে আমলকীর কার্যকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: আমলকীর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান জ্বর, ঠান্ডা, মূত্রনালির সংক্রমণসহ নানা সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
২. ক্লান্তি ও অলসতা দূর: নিয়মিত খেলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, মেজাজ ভালো থাকে, বমি বমি ভাব কমে।
৩. পেট ও হজমের সমস্যা সমাধান: অ্যাসিডিটি, গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আমলকীর জুস অত্যন্ত কার্যকর।
৪. গর্ভকালীন স্বাস্থ্য: গর্ভাবস্থায় হাত-পায়ের ফোলা কমাতে এবং হাইড্রেশন নিশ্চিত করতে আমলকীর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও জলীয় উপাদান সহায়ক।
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ভিটামিন সি রক্তনালী প্রসারিত করে, যা স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৬. মাড়ি ও দাঁতের স্বাস্থ্য: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ আমলকী দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখে, রক্তপাত কমায় এবং দুর্গন্ধ দূর করে।
৭. শরীর থেকে টক্সিন বের করা: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে, যা লিভার ও কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৮. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান হবু মায়েদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৯. স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: নিয়মিত খেলে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে, সর্দি-কাশি কমে।
১০. ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য: কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়ক, বলিরেখা, পিগমেন্টেশন, পোড়া দাগ ও তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা কমায়। চুলকে ঘন, রেশমি ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখে।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, সকালে নাশতার পর একটি করে তাজা আমলকী খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। এটি সরাসরি রক্তে ভিটামিন সি যোগ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে, শরীরকে এনার্জি প্রদান করে। এছাড়া ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যও ধরে রাখে।
আমলকী শুধুমাত্র ফল হিসেবেই নয়, পাতা ও বীজও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাতেও আমলকীর জুস, পেস্ট বা গুঁড়া আকারে ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে।
সকালে একটি আমলকী খাওয়ার অভ্যাস শুধু দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বজায় রাখে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষা করে। এটি একটি ছোট, কিন্তু শক্তিশালী ভেষজ উপাদান যা প্রতিটি পরিবারের ডায়েটে নিয়মিত স্থান পেতে পারে।
ভালো স্বাস্থ্য ও জীবনের দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে সকালের নাশতার সঙ্গে আমলকীকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সূত্র: বোল্ডস্কাই, পুষ্টিবিদ্যাগবেষক, চিকিৎসক সাক্ষাৎকার
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



