
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চললেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ শতভাগ অনুকূলে রয়েছে। কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, নির্বাচনে ভোট না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ইসির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই গেজেট অনুযায়ীই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। কমিশনের দাবি, আইন ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই এই সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে আসন পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। গেজেট প্রকাশের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। বাগেরহাট, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক কর্মীরা সড়ক অবরোধ, মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, ইসির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে অসন্তুষ্ট রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা আইনের আশ্রয়ে যাওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, “আমরা সম্পূর্ণ আইন মেনে এবং নিরপেক্ষভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছি। এ নিয়ে আন্দোলন বা কর্মসূচির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। আদালতে গেলে আমরা সঠিকভাবে আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারব।”
সংসদীয় আসনের কতগুলো সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে—সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সঠিক সংখ্যা এই মুহূর্তে তার জানা নেই। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইন ও বিধি মেনেই কাজ করা হয়েছে।
ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে কমিশনার বলেন, “এখন পর্যন্ত পরিবেশ শতভাগ ভোটের অনুকূলে রয়েছে। ভোট না হওয়ার কোনো কারণ নেই।” তার মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি মাসেই নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। এর আগে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এর মাধ্যমে সব দলকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসির বক্তব্য আশ্বস্তকর হলেও মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি এখনো অনেকাংশে অস্থির। আসন বিন্যাসকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তা নির্বাচনের সময় আরও বিস্তৃত আকার নিতে পারে। সমালোচকদের মতে, শুধুমাত্র আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণের অসন্তোষ দূর করা সম্ভব নয়; বরং ব্যাপক পরামর্শ, স্বচ্ছতা ও আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় জনমতের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি। তারা মনে করছে, অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীর সুবিধা নিশ্চিত করতেই এমন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বারবার বলছে, তাদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ এবং এতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব নেই।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসি এখন পর্যন্ত নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন নিবন্ধনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চাইছে কমিশন। এ জন্য সংলাপ, আলোচনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে, নির্বাচন কমিশন বারবার বলছে, ভোটের পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে এবং এ অবস্থায় কোনো আশঙ্কার কারণ নেই। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন, আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি এবং জনগণের অসন্তোষের বিষয়গুলো ইসির সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দাঁড়াতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ