
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি বড় ঘোষণা দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি দলের নেতাকর্মীদের কাছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি অধ্যায়।
শনিবার রাজধানীতে পূর্বালী ব্যাংক কর্মচারী সংঘের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ তথ্য দেন জাহিদ হোসেন। তার বক্তব্যে শুধু তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের কথা নয়, বরং বিএনপির চলমান রাজনৈতিক অবস্থান, সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং আসন্ন নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোকপাত করেন তিনি।
জাহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সরাসরি জনগণের মাঝে থাকবেন। তার নেতৃত্বেই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নতুন গতি পাবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে এবং এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দলের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।
তার ভাষায়, “পতিত স্বৈরাচার পেছনের দরজা দিয়ে এসে জনগণের অধিকার হরণ করার চক্রান্ত করছে। যারা দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়, তারাই এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই আমাদের সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।”
সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জাহিদ হোসেন বলেন, “আজ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কোনো সাধারণ অবস্থা নয়। সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে এবং চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে কোনো প্রকার গোপন সমঝোতা কিংবা স্বেচ্ছাচারী শাসন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রবর্তিত পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিকে বেআইনি অভিসন্ধি আখ্যা দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “সংবিধান ইচ্ছে করলেই ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া যায় না। এটি জনগণের চুক্তি, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। তাই আবেগী না হয়ে আমাদের জনআকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাতে হবে। জনগণের যে প্রত্যাশা, সেটিই আমাদের পথ নির্দেশ করবে।”
তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণায় বিএনপির মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ভিডিও কনফারেন্স ও ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সব সময়ই তার শারীরিক উপস্থিতি চেয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির জন্য নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যখন সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সর্বাত্মক করতে চাইছে, তখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তন তাদের কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলনে বিএনপি নেতারা একসুরে বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে আবারও গণতন্ত্রের জয় নিশ্চিত হবে। জাহিদ হোসেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এটি শুধু একটি দলের আন্দোলন নয়, এটি জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। তাই আমাদের লড়াইকে শক্তিশালী করতে ঐক্য অপরিহার্য।”
তারেক রহমানের দেশে ফেরা যে বিএনপির জন্য একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হতে পারে, তা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যেই প্রতিফলিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ঘোষণা কিভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং দেশের রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে মোড় নেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ