
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় গেলে ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, একমাত্র বিএনপিই দেশের মানুষকে মুক্ত গণতন্ত্র উপহার দিতে পারে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্ত ভিত গড়ে তুলতে সক্ষম।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ প্রায় আট বছর পর জেলায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে ঘিরে সকাল থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এলাকা ছিল উৎসবমুখর। পাঁচ উপজেলা ও তিন পৌরসভার ৮০৮ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগ ও পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি
মির্জা ফখরুল বলেন, “ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার কারণে আজ দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন কিংবা মিডিয়ার স্বাধীনতা—কোনোটাই টিকিয়ে রাখা হয়নি। দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলা হবে এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি সেই রাজনৈতিক দল, যারা অতীতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া কোনো জাতি টিকে থাকতে পারে না। তাই বিএনপির লক্ষ্য হলো একটি মুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মানুষের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে।”
৩১ দফা কর্মসূচির উল্লেখ
বিএনপির মহাসচিব এ সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবদানও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের সামনে ২১ দফা কর্মসূচি তুলে ধরে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন রূপকল্প উপস্থাপন করেছিলেন। এখন ফ্যাসিস্ট শাসনে তছনছ হওয়া বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে একটি নতুন ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।”
তারেক রহমানের নেতৃত্বে টেকসই গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি
ফখরুল বলেন, “এই সম্মেলন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বিএনপিকে সংগঠিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আজকের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।”
আন্দোলন ও ত্যাগের কথা স্মরণ
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অথচ তারা আন্দোলন থেকে পিছপা হননি। এই ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আবারো জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে।”
সম্মেলনের পরিবেশ ও উপস্থিত নেতারা
সম্মেলন উদ্বোধনের সময় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ সাত বছর আট মাস পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় জেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। সকাল থেকে জেলা শহর ভরে ওঠে শ্লোগান, মিছিল আর ব্যানার-ফেস্টুনে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই সম্মেলন নতুন নেতৃত্ব গড়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ