
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে জুলাই ঐক্যের সর্বশেষ ঘোষণা। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী দুঃশাসনের দীর্ঘদিনের অংশীদার ১৪ দলকে নিষিদ্ধের আলটিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করা এই প্ল্যাটফর্ম স্পষ্ট করে জানিয়েছে—আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম বন্ধ ও নিষিদ্ধ না করলে তারা রাজপথে নেমে কঠোর কর্মসূচি দেবে এবং প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জুলাই ঐক্য জানায়, শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং অন্তত ৮০টি অংশগ্রহণকারী সংগঠনের সঙ্গে এক যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু গণতন্ত্র ধ্বংস করেনি, বরং জাতীয় পার্টিসহ সহযোগী দলগুলোকে সামনে রেখে দেশকে দীর্ঘ সময় ধরে সন্ত্রাস, দমননীতি ও গণহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার মাত্র দুই দিন পরেই—গত ১৩ মে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্য প্রথমবারের মতো ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার আনুষ্ঠানিক দাবি তোলে। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ একা নয়, বরং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম দলগুলোই আসলে দেশের জনগণের ওপর অত্যাচার চালানো, ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের প্রধান সহযাত্রী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের অনেক নেতাকর্মী নানাভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জুলাই ঐক্য জানিয়েছে, জাতীয় পার্টির ঢাকাসহ রংপুর ও অন্যান্য অঞ্চলের অফিসগুলোতে দেশীয় অস্ত্র মজুত রাখা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড শুধু আইনের শাসনকেই চ্যালেঞ্জ করছে না, বরং সরাসরি জুলাই যোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জুলাই ঐক্য মনে করে, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া দুই হাজার মানুষ এবং আহত লাখো কর্মী-সমর্থকের রক্তের বিনিময়ে গড়ে ওঠা নতুন বাংলাদেশে কোনোভাবেই গণহত্যাকারী বা প্রহসনের রাজনীতিতে জড়িত দলগুলোর অস্তিত্ব থাকার সুযোগ নেই। তাদের মতে, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গণতন্ত্রের মূলধারাকে ধ্বংস করেছে এবং প্রতিবারই ক্ষমতাসীন শক্তির ছত্রছায়ায় নির্বাচনী প্রহসনের অংশ হয়েছে। তাই এই দলকে বৈধতা দেওয়া মানে জনগণের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।
জুলাই ঐক্য তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা হয়েছিল—আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ থাকবে। কিন্তু বাস্তবে এখনো দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সহযোগীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মিছিল করছে, হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এগুলো সরকারের দুর্বলতা বা গড়িমসির পরিচায়ক বলেই মনে করছে জুলাই ঐক্য।
জুলাই ঐক্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলকে নিষিদ্ধ না করা হয়, তবে তারা আর চুপ করে থাকবে না। তাদের ভাষায়, “আন্তর্বর্তী সরকার যদি গড়িমসি করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং একইসঙ্গে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।” সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে, জাতীয় স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষার্থে কোনোভাবেই এসব দলের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জুলাই ঐক্যের এই আলটিমেটাম নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ, অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে ঘিরে যখন বিভাজন তৈরি হচ্ছে, তখন জুলাই ঐক্যের অবস্থান দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকার এই দাবির প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয় এবং আসন্ন ৯ সেপ্টেম্বরের আগে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে কী পরিবর্তন ঘটে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ