
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫-এর আগমনী প্রাক্কালে ছাত্ররাজনীতিতে উত্তেজনা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোট বানচাল, ষড়যন্ত্র, অনলাইন বুলিং এবং প্রশাসনের দুর্বল ভূমিকার কারণে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে, যা ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়ন, শিক্ষার্থীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মব তৈরি ও সাইবার বুলিংয়ের শঙ্কা রয়েছে। কমিশন দুর্বল ভূমিকা পালন করছে এবং প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ প্রক্রিয়ায় যদি ষড়যন্ত্র হয়, তবে তা শুধু ডাকসু নয়, ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনকেও প্রভাবিত করবে।”
অন্যদিকে, ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েমও ভোট বানচালের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। তবে প্রার্থীরা দায়িত্বশীল আচরণ করলে ষড়যন্ত্র সফল হবে না। সাইবার বুলিং, প্রোপাগান্ডা ও বহিরাগতদের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসংসদের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, “আমার ডাকসুতে জেতা লাগবে না, কেবল বেঁচে থাকতে চাই। বাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অনলাইনে শুরু হওয়া হেনস্তা আরও বাড়ছে। আমি আর কতদিন নিতে পারবো জানি না।”
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার জানিয়েছেন, “২০১৯ সালের মতো কারচুপি হলে শিক্ষার্থীরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবে। আগাম ব্যালট বাক্স পূরণ বা ভোট কারচুপির চেষ্টা হলে তা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।” তিনি আরও বলেন, অনলাইনে প্রোপাগান্ডা ও বর্ণবাদী মন্তব্যের মাধ্যমে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ’ প্যানেল আজ ১৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। জোটের ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, এ ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার মান উন্নয়ন, লাইব্রেরি ও ফ্রি ওয়াইফাই, আধুনিক গবেষণা কেন্দ্র, নিরাপদ ও পর্যাপ্ত আবাসন, হল এবং খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত।
সমন্বিত শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল তাদের ২৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ভিপি প্রার্থী মো. জামাল উদ্দিন খালিদ বলেছেন, তাদের লক্ষ্য ক্যাম্পাসকে নিরাপদ, সহিংসতামুক্ত ও আধুনিক অবকাঠামোসম্পন্ন করা। এছাড়াও শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনের জন্য সমান সুযোগ, দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, আধুনিক কারিকুলাম প্রণয়ন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিশেষ সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য ক্যাম্পাস প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবার যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিস) ছাড়া অন্য যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না।
ক্যাম্পাসে নির্বাচন ঘিরে ছাত্ররাজনীতির উত্তেজনা এবং অনলাইন হুমকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির উভয়ই ভোট বানচাল, ষড়যন্ত্র ও প্রশাসনের দুর্বলতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, প্যানেলগুলো শিক্ষার্থীদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক ইশতেহার ঘোষণা করে ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রবেশ সীমাবদ্ধতা নির্বাচনী শান্তি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের এই প্রেক্ষাপটে প্রার্থীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা আগামী নির্বাচনের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ