
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ ও অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ হলো বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর)। রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস। এসময় তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জাতিসংঘ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের পূর্ণ সমর্থনে রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকের শুরু থেকেই আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করছে এবং আসন্ন নির্বাচনেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জাতিসংঘ সম্পূর্ণভাবে ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে। এই নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, শান্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় কারিগরি ও কূটনৈতিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
বৈঠকে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বর্তমান সহযোগিতার প্রশংসা করেন আবাসিক সমন্বয়ক লুইস। তিনি বলেন, চলমান সংস্কার কর্মসূচি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং জাতিসংঘ এই রূপান্তরমূলক উদ্যোগগুলোর পাশে থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জনগণের প্রত্যাশা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। উভয় পক্ষই স্বীকার করেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা তহবিলে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় টেকসই আন্তর্জাতিক সংহতি এবং বাড়তি সহায়তা এখন জরুরি।”
গোয়েন লুইসও এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনকে ঘিরে এই সংকটের বিষয়ে বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর দুই পক্ষই একমত হন।
বৈঠকের শেষ পর্যায়ে লুইস বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের অটল সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “সংস্কার, গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং টেকসই উন্নয়নের যাত্রায় জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আমরা শুধু আগামী নির্বাচনে নয়, বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্যও সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।”
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস জাতিসংঘের এই সমর্থনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রূপান্তরমূলক যাত্রায় জাতিসংঘের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন এক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।
এই বৈঠক শুধু একটি কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং বাংলাদেশের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের একটি স্পষ্ট বার্তা। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়ে দেওয়া হলো—বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং এই প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভবিষ্যৎ।
সংক্ষেপে বলা যায়, গোয়েন লুইসের এই বৈঠক ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের সক্রিয় উপস্থিতি আরও স্পষ্ট হলো। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে জাতিসংঘের অবস্থান কেবল রাজনৈতিক সমর্থন নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য বৈশ্বিক সংহতির প্রতিফলন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ