
ছবি: সংগৃহীত
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তারা বিক্ষোভে নেমে একটি পরিবহন বাস আটকে রেখে তা ক্যাম্পাসে নিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মুন্না ঢাকাগামী ইউনিক পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি সকালে পাগলা থেকে ছাড়ে এবং ভুরঘাটা এলাকায় পৌঁছালে চালক নুরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই সময় উত্তেজিত চালক শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাঁকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল, তবে বাসে থাকা অন্যান্য যাত্রী বিষয়টি সামাল দেন। তারা চালককে শান্ত করে আবার তাঁর আসনে বসান।
বাসে ওঠা কয়েকজন যাত্রী পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শিক্ষককে প্রকাশ্যে অসম্মান করার ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
দিনভর উত্তেজনার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি হেমায়েত জাহানকে সঙ্গে নিয়ে পায়রা সেতুর টোলপ্লাজায় গিয়ে ইউনিক পরিবহনের কাউন্টারের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন এবং দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
বিক্ষোভ চলাকালীন কুয়াঘাটাগামী ইউনিক পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে শিক্ষার্থীরা যাত্রীদের নামিয়ে দেন। পরে গাড়িটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার পরও পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিনিধি দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চাইতে আসেননি। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।
খবর পেয়ে দুমকি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। তবে তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন শিক্ষককে অপমান করা মানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অসম্মান করা। তারা চালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক দুঃখ প্রকাশ দাবি করেছেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ঘটনার প্রতি গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। প্রো-ভিসি হেমায়েত জাহান বলেছেন, “শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষায় আমরা কোনো ধরনের আপস করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ইউনিক পরিবহনের কাউন্টারে বিক্ষোভ করলেও পরিবহন কর্তৃপক্ষের কেউ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দ্রুত ক্ষমা চাওয়া এবং ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে নামবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ