
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের আলোচনায়ও এ প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে আসছে—তিনি কবে দেশে ফিরবেন এবং দেশে ফিরলে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী প্রভাব পড়বে? এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি সম্পূর্ণ তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সরকার এখানে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। প্রয়োজনে তাঁর ভ্রমণ নথি বা পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান করবে সরকার।”
তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশে ফেরার প্রথম সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারেক রহমানকে নিজেকেই। যদি তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সরকার তার আইনি ও কূটনৈতিক নথিপত্র সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে সহায়তা করবে। এর বাইরে সরকার থেকে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়টি অনেকাংশে রাজনৈতিক হলেও এখানে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। সরকার কেবল তার আইনি ভ্রমণ নথি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া তারেক রহমানের ওপরই নির্ভর করছে।”
সাংবাদিকরা জানতে চান, ভারত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে যেসব আলোচনা চলছে সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না। উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “ঢাকা থেকে করা অনুরোধের বিষয়ে এখনো কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ঢাকা থেকে দ্বিতীয় কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধপত্রও পাঠানো হয়নি।”
এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দেন যে বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে।
২০০৮ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। দলীয় নেতাকর্মীদের বহুদিনের দাবি, তিনি দেশে ফিরে সক্রিয় নেতৃত্ব দিলে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বেশ কিছু মামলার রায় থাকায় দেশে ফিরলে তিনি আইনি জটিলতার মুখোমুখি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন মন্তব্য একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করছে—সরকার সরাসরি বাধা দেবে না, তবে দেশে ফেরার পর আইনি প্রক্রিয়ায় যা হওয়ার তা হবে।
তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপির ভেতরকার অনেক নেতা মনে করছেন, এই বক্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের ‘সবুজ সংকেত’। তবে তারেক রহমান আদৌ দেশে ফিরবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো অনিশ্চিত।
সব মিলিয়ে তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখনো একটি খোলা প্রশ্ন। সরকার বলছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারেক রহমানের; বিএনপি চাইছে তিনি ফিরে আসুন; আর সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করছে এ রাজনৈতিক সমীকরণ কোন পথে গড়াবে তা দেখার জন্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ