
ছবি: সংগৃহীত
দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। পুলিশ সদর দপ্তরের গোপন সূত্র বলছে, তাদের কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশনা এসেছে—জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করতে হবে। ইতোমধ্যেই নানামুখী অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।
আইজিপি-ডিএমপি কমিশনারের ভার্চুয়াল বৈঠক
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক জুম মিটিংয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। আইজি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এবং সাজ্জাত আলী ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে বৈঠকে যুক্ত ছিলেন। মিটিং শেষে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নির্বাচনী পরিবেশকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টার্গেটে জাতীয় ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করেছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকুস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চকসু এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এই চারটি ক্যাম্পাস নির্বাচনের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। কেননা, এসব নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা হলে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশও নষ্ট হবে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিএমপির প্রস্তুতি ও নতুন নির্দেশনা
মিটিংয়ের আগে কমিশনার সাজ্জাত আলী ডিএমপির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। বৈঠক শেষে ডিএমপির একটি সূত্র জানায়—
ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে “অলআউট সাপোর্ট” দেবে ডিএমপি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে, সবই দেওয়া হবে।
শাহবাগ এলাকায় সার্বক্ষণিক একটি প্লাটুন মোতায়েন রাখা হয়েছে।
৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্যাট্রোলিং আরও বাড়ানো হবে, বিশেষত মোটরসাইকেল প্যাট্রোলিংয়ে জোর দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকবে সার্বক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স।
ডিএমপি ও প্রক্টরিয়াল টিমের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার ও অতিরিক্ত উপকমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিকাল ৩টার পর থেকে তারা একা চলাফেরা করতে পারবেন না; প্রয়োজনে ফোর্স সঙ্গে নিতে হবে।
এ ছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি মিডিয়া হাউজ তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য সেখান থেকেই পেতে পারেন।
ষড়যন্ত্রের প্রমাণ ও গ্রেফতার
পুলিশ সূত্র জানায়, সম্প্রতি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আওয়ামী লীগের ব্যানারে একটি মিছিল হয়েছে। এটি আসলে নির্বাচনী ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। মিছিলে অংশ নেওয়া মিজানুর রহমান নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে নির্দেশনা এসেছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেই তারা মাঠে সক্রিয় হয়েছেন।
আইজিপির নির্দেশনা
পুলিশ সদর দপ্তরের আরেকটি সূত্র জানায়, গুজব প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন—
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপশক্তি সক্রিয় রয়েছে।
সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।
ডিএমপির আনুষ্ঠানিক বার্তা
ডিএমপি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় কমিশনার এ কথা বলেন।
সভায় নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তুলে ধরেন ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এরপর উপস্থিত অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করে তাদের মতামত দেন। সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম, হাসান মো. শওকত আলী, মাসুদ করিম, শফিকুল ইসলাম, জিললুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং ডাকসু নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার যে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তা প্রতিহত করতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখাই এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গোয়েন্দা নজরদারি, বাড়তি মোতায়েন ও কঠোর আইনগত পদক্ষেপের ওপর ভরসা করছে পুলিশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ