
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর যানজট দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিন লাখো মানুষ কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাস্তায় নামেন। অথচ সড়কে অতিরিক্ত যানবাহন, অনিয়মিত চলাচল ও কার্যকর সিগন্যাল ব্যবস্থার অভাবে তৈরি হয় তীব্র যানজট। সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন গুনতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ের ক্ষতি। এ বাস্তবতায় অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নতুন স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।
গতকাল রোববার ডিটিসিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং জাহাঙ্গীর গেট— এই সাতটি মোড়ে চালু হয়েছে নতুন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা। এগুলো রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম মোড়গুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে।
ডিটিসিএ জানিয়েছে, এ প্রকল্প শুধু তাদের একক উদ্যোগ নয়। বরং রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এসব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থার কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় আনবে।
ঢাকায় সড়ক পরিবহনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অকার্যকর সিগন্যাল ব্যবস্থা। অনেক মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল থাকলেও তা সচল থাকে না, ফলে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারার ওপর। এতে যেমন নিয়ম ভঙ্গ বেড়ে যায়, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়। সড়ক বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলছিলেন, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা ছাড়া যানজট নিরসন সম্ভব নয়। অবশেষে সেই দাবি আংশিক পূরণ হলো এই সাতটি মোড়ে পরীক্ষামূলক চালুর মাধ্যমে।
ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সাতটি মোড়ে এ ব্যবস্থা চালু করা হলেও পরিকল্পনা রয়েছে ধাপে ধাপে রাজধানীর ২২টি মোড়ে এই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালুর। এতে করে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, “সাতটি মোড়ে নতুন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর কার্যকারিতা যাচাই করে পর্যায়ক্রমে আরও ২২টি মোড়ে এ ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।”
যানজট নিরসনে নাগরিকরা সবসময়ই কার্যকর পদক্ষেপ চান। এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানালেও অনেকের প্রশ্ন— আগের মতো যেন সিগন্যাল ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে পড়ে না থাকে। রাজধানীবাসীর প্রত্যাশা, শুধু পরীক্ষামূলক পর্যায়ে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর রাখার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সিগন্যাল চালু করলেই হবে না। পাশাপাশি প্রয়োজন গণসচেতনতা, সড়ক আইন মেনে চলা, যানবাহনের সুশৃঙ্খল গতি ও কঠোর আইন প্রয়োগ। তবেই কেবল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ