
ছবি: সংগৃহীত
ঢালিউডের নবপ্রজন্মের আলোচিত অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান বর্তমানে চলচ্চিত্র ও ওয়েব কনটেন্ট জগতে নিজের অবস্থান শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করছেন। অভিনয় দক্ষতা, সংলাপ উপস্থাপন ও চরিত্রে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা দিয়ে অল্প সময়েই তিনি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘উৎসব’ তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ছবিটির একটি সংলাপ— “ডানা থাকলেই উড়তে হয় না, জেসমিন”— এখন ভক্ত-অনুরাগীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। নারীর স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রশ্নে সংলাপটি যেন সময়োপযোগী এক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তানিম নূর পরিচালিত এই সিনেমায় নব্বই দশকের এক সহজ-সরল অথচ দৃঢ়চেতা নারী ‘জেসমিন’-এর চরিত্রে অভিনয় করেন সাদিয়া আয়মান। জেসমিন জানে তার জীবনের লক্ষ্য কী এবং সেই লক্ষ্য পূরণে সে একেবারেই আপসহীন। তবে সিনেমায় স্বামী খাইষ্টা জাহাঙ্গীরের (অভিনয়ে জাহিদ হাসান) চোখে জেসমিনকে দেখা হয় ভিন্ন দৃষ্টিতে। সংসারে তার প্রতি সমান মর্যাদা বা সম্মান প্রদর্শনের অভাব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
জেসমিনকে অবহেলা করলেও চরিত্রটির প্রতি একরকম চাপা ভালোবাসা ছিল খাইষ্টা জাহাঙ্গীরের, যা প্রকাশ পায়নি যথাযথভাবে। আর এ জায়গাটিই যেন দর্শকদের মনে গভীর নাড়া দেয়। চরিত্রটির সঙ্গে নিজের বাস্তব জীবনকে মেলাতে গিয়ে সাদিয়া আয়মান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— এমন জীবনসঙ্গী তিনি কোনোভাবেই চান না।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী খোলামেলা উত্তর দেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, যদি বিয়ের পর স্বামী খাইষ্টা জাহাঙ্গীরের মতো হয়ে পড়েন— পড়াশোনা বা অভিনয় থেকে তাকে বিরত রাখতে চান, শুধু সংসার সামলাতে চাপ দেন— তখন তিনি কী করবেন?
প্রত্যুত্তরে সাদিয়া আয়মান বলেন, “যে আমাকে বিয়ে করবে, সে তো জানবেই আমি কী করি, আমার ক্যারিয়ার কী। বিয়ের আগেই আমাদের বোঝাপড়া হবে। কিন্তু যদি বিয়ের পর হঠাৎ বলা হয়— কাজ ছেড়ে দাও, আমার মনে হয় না আমি সে রকম কোনো সুযোগ দেব।”
তিনি আরও বলেন, সাধারণত মানুষ ক্যারিয়ারের একটি পর্যায়ে গিয়ে বিয়ে করেন। তার ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন হবে না। “আমি যদি ৩০-এর মধ্যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই, তখনও আমার ক্যারিয়ার পিক অবস্থায় থাকবে। আমি জানব কীভাবে পরিকল্পনা করতে হবে।”
অভিনেত্রীর এই বক্তব্য স্পষ্ট করে যে, তিনি ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবন—দুটিকে সমানতালে চালিয়ে নিতে চান। তার কাছে বিয়ে মানে জীবনসঙ্গীর প্রতি দায়িত্বশীলতা ও বোঝাপড়ার সম্পর্ক, যেখানে ক্যারিয়ার বিসর্জন নয় বরং পারস্পরিক সমর্থন থাকবে।
শুধু সিনেমাই নয়, ওয়েব কনটেন্টেও সাদিয়া আয়মান দারুণ সাড়া ফেলেছেন। অমিতাভ রেজার ওয়েব সিরিজ *‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’*য় অভিনয় করে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন সমালোচক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক পর্যন্ত সবার কাছেই। হাতে রয়েছে আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র ও ওয়েব প্রজেক্ট, যা নিয়ে তিনি এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নিজের চরিত্র নির্বাচনে সতর্ক। ভিন্নধর্মী, গভীর বার্তাবাহী গল্পের চরিত্রে অভিনয় করতেই বেশি আগ্রহী। ‘উৎসব’-এর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, তিনি কেবল গ্ল্যামার নির্ভর নন, বরং অর্থবহ চরিত্রেও সমান স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
সিনেমাটির অন্যতম পিক পয়েন্ট ছিল জেসমিন চরিত্র। দর্শকেরা মনে করেন, যদি গল্পে প্রিয়জনের স্বাধীনতা ও নিজস্বতার বিরুদ্ধে না গিয়ে বরং সহযোগিতা করা হতো, তবে গল্পের সমাপ্তি হতে পারত সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ও ইতিবাচক। আর এই বার্তাটিই সিনেমাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
‘উৎসব’ সিনেমায় সাদিয়া আয়মান ছাড়াও ছিলেন জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, আফসানা মিমি, আজাদ আবুল কালাম, সৌম্য জ্যোতি প্রমুখ। তাদের অসাধারণ অভিনয় মিলিয়ে ছবিটি পরিণত হয়েছে এক অনন্য সংযোজনে।
সব মিলিয়ে সাদিয়া আয়মান স্পষ্ট করে দিয়েছেন— তিনি খুঁজছেন এমন জীবনসঙ্গী, যিনি তার ক্যারিয়ারকে সম্মান করবেন, বোঝাপড়া করবেন এবং তাকে থামিয়ে দেবেন না। জীবনের বাস্তবতা ও শিল্পীসত্তার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে চান নিজের মতো করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ