
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ক্রিকেটপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনে পরিচালক পদে লড়ার ঘোষণা দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন দেশের অন্যতম সফল ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। তবে এটিই তার শেষ লক্ষ্য নয়। তিনি খোলাখুলিভাবে জানিয়েছেন, যথেষ্ট সমর্থন পেলে বিসিবির সর্বোচ্চ পদ— সভাপতির দায়িত্বও নিতে চান তিনি। ক্রিকেটার থেকে প্রশাসকের পথে পা বাড়ানোয় স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন এই তারকা ক্রিকেটার।
এক সাক্ষাৎকারে দেশের ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন তামিম। তার ভাষায়, “এখন যা হচ্ছে তা মোটেও ভালো না। সবাই একে অপরকে ছোট করছে, মিথ্যা ছড়াচ্ছে। কিছু সত্যি, কিছু মিথ্যা। এখন আলোচনা হওয়া উচিত – কে নতুন চিন্তা আনতে পারবে, কে এই সময়ে ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।”
তিনি মনে করেন, শুধু মাঠের খেলোয়াড়দের নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদেরও মানসিকতা আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। “সবাই বলছে বাংলাদেশকে আধুনিক ক্রিকেট খেলতে হবে। কিন্তু শুধু খেলোয়াড়দের নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মানসিকতাও আধুনিক হতে হবে। পুরনো চিন্তায় চললে সমস্যা হবে।”
তামিম জানিয়েছেন, তিনি যদি নির্বাচিত হন তবে একসাথে অনেক কিছু করার চেষ্টা করবেন না। বরং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেবেন, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে।
“যদি নির্বাচিত হই, আমি আগামী প্রজন্মের জন্য আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। তবে চার বছরের মেয়াদে যদি একসাথে অনেক কিছু করতে যাই, তাহলে কিছুই ঠিকভাবে হবে না। কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় মনোযোগ দিতে চাই।”
তামিম ইকবালের মূল অগ্রাধিকার হবে দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো উন্নয়ন। তিনি বলেন, “খেলোয়াড় আছে, কোচ আছে, কিন্তু তাদের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। এখনো একই অ্যাকাডেমি মাঠে খেলোয়াড়দের অনুশীলন করতে হয়। বিপিএল বা ডিপিএলের সময় সাতটা দল এক মাঠে প্র্যাকটিস করে। অথচ বিসিবি বিশ্বের ধনী বোর্ডগুলোর একটি, প্রায় ১৩০ কোটি টাকার এফডিআর আছে, কিন্তু কাউন্টি দলের মতো অবকাঠামো নেই।”
তামিমের বিশ্বাস, টেকসই উন্নয়নের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা, মানসম্মত স্টেডিয়াম, একাডেমি ও প্র্যাকটিস সুবিধা গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। “অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে কেউ কথা বলে না। যদি সুযোগ পাই, আমি আগামী চার বছরে সেই ভিত্তি গড়ে দিতে চাই, যাতে আগামী ৮-১০ বছরের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যেতে পারে।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যেমন ধরুন, আপনি যদি ব্যবসা শুরু করেন আর কারখানা না থাকে, তাহলে পণ্য তৈরি হবে কোথায়? ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।”
তামিম মনে করেন, দীর্ঘদিনের একই ধরনের চিন্তাভাবনা দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারছে না। পরিবর্তনের জন্য নতুন নেতৃত্ব, নতুন পরিকল্পনা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেছেন, “এখন দরকার আধুনিক মানসিকতার কেউ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ক্রিকেটাররা মাঠে আধুনিক ক্রিকেট খেলছে, কিন্তু বোর্ড পরিচালনায় যদি আমরা পুরনো ধারায় আটকে থাকি, তাহলে অগ্রগতি সম্ভব নয়।”
বিসিবির সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে। তার অন্তত ৩০ দিন আগে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে বোর্ড। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর। তামিম মনে করেন, এ সময় এমন একজনকে নেতৃত্বে আনার, যিনি সত্যিই দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
তামিম ইকবালের দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ার সবার জানা। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি— তিন ফরম্যাটেই দেশের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে তিনি ১৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করেছেন। এবার সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ক্রিকেট প্রশাসনে যুক্ত হতে চান তিনি।
তার মতে, একজন ক্রিকেটার মাঠে খেলে যেমন দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, তেমনি প্রশাসনিক স্তরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যায়। আর তিনি সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ