
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) তদন্তের নামে চলে প্রহসন—এমন অভিযোগ নতুন নয়। খেলোয়াড়, কোচ, আম্পায়ার কিংবা লিগে ঘটে যাওয়া অনিয়ম-অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। বিসিবির সাবেক এক পরিচালক সরাসরি বলেন, “তদন্ত কমিটিরও তদন্ত করা উচিত। রিপোর্ট জমা দিয়েই শেষ, এরপর আর কোনো ফলোআপ নেই। অনেক সময় তো রিপোর্ট জমাই হয় না। এভাবে তদন্ত শুধু প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।”
তদন্তের রিপোর্ট থাকে অকার্যকর
বিশ্বকাপসহ প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টের ব্যর্থতার পর বা কোনো বিতর্কিত ঘটনার জেরে কমিটি গঠনের নজির আছে বিসিবিতে। কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এসব তদন্ত থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নজির নেই। সর্বশেষ ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতা ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের হাতে নাসুম আহমেদকে চড় মারার ঘটনা নিয়েও তদন্ত হয়েছিল। তৎকালীন মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও এনায়েত হোসেন সিরাজকে নিয়ে গঠিত সেই কমিটি কিছুই খুঁজে পায়নি।
এমনকি ২০১৫ সালে আল আমিন হোসেনকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেওয়া হলেও প্রকৃত কারণ আজও প্রকাশ্যে আসেনি।
ঢাকা লিগ ও আম্পায়ার বিতর্ক
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল), দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়মের আখড়া হিসেবে সমালোচিত। আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্ব ও ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল বহুবার। কিন্তু প্রতিবার তদন্ত কমিটি বসে আবার ধামাচাপা পড়ে গেছে। স্পষ্ট চোখে যা বোঝা যেত, সেটিই কমিটি প্রমাণ করতে পারেনি—এমনই অভিযোগ উঠেছে ক্রিকেট মহল থেকে।
ফিক্সিং নিয়ে প্রহসন
বিপিএল শুরুর দিন থেকেই ফিক্সিংয়ের অভিযোগে জর্জরিত। কয়েক দফায় দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে শুরু করে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কিংবা দোষীদের নাম আসেনি। অথচ আইসিসি কয়েকজনকে চিহ্নিত করে শাস্তিও দিয়েছে। সবশেষ বিপিএল ও ডিপিএলেও অনেকে ফিক্সিংয়ের গন্ধ পেয়েছিলেন। তদন্তও হয়েছিল, কিন্তু রিপোর্টে আবারও কোনো নাম প্রকাশ পায়নি।
অভ্যন্তরীণ স্বার্থ জড়িত
বিসিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নাম আসবে কীভাবে? যারা করেন, তারাই তো তদন্ত করেন। কমিটির ভেতরে ঘুরেফিরে একই মানুষ থাকেন।” এ কারণে তদন্তের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ।
নীতিহীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্রিকেট
দীর্ঘদিনের ক্রিকেট সংগঠক এবং লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মালিক লুৎফুর রহমান বাদল মনে করেন, বিসিবির ব্যর্থতার মূল কারণ সুশাসনের অভাব। তাঁর ভাষায়, “পলিসি মেকারের কাজ কখনো কর্মচারী দিয়ে হয় না। যেখানে কোনো লক্ষ্য নেই, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই, সেখানেই লক্ষ্য হয়ে যায় ব্যক্তিস্বার্থ। স্বার্থ যেখানে মুখ্য, সেখানে শুধু ক্ষমতার অপব্যবহারই হবে, ফল পাওয়া যাবে না।”
ফলে বিসিবির তদন্ত সংস্কৃতি কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিজেই।
বাংলাবার্তা/এমএইচও