
ছবি: সংগৃহীত
খুলনা অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে সহায়তার অভাবে। স্থানীয় বাজার চাহিদা থাকলেও ঋণের জটিলতা, প্রশিক্ষণের ঘাটতি এবং বাজারজাতকরণের দুর্বলতা উদ্যোক্তাদের বড় হতে দিচ্ছে না।
দৌলতপুরের ছাকেরা বানু বহু নারীর স্বপ্নের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে তিনি পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা শুরু করেন। ব্যাগ, কার্পেট, গয়না—সবকিছুই ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি হয়। কিন্তু সরকারি সহায়তা না থাকায় তিনি থেমে গেছেন। ছাকেরা বানু বলেন, “সহজ শর্তে ঋণ ও বাজার সাপোর্ট পেলে শুধু আমি নই, আরও অনেকে উদ্যোক্তা হতে পারতেন। কিন্তু ব্যাংকের শর্ত ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন।”
খুলনার নগর, দৌলতপুর, খালিশপুর, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠেছে। বুটিকপাড়ায় জামা-কাপড়, কাঠের কারখানায় গৃহস্থালি সামগ্রী, প্লাস্টিক শিল্পে স্যানিটারি সামগ্রী, বেতের তৈরি আসবাব—সবখানেই স্বপ্নের হাতছানি। কিন্তু উদ্যোক্তারা জানান, নির্দিষ্ট প্রদর্শনী কেন্দ্র নেই, অনলাইন বিক্রি করতে গিয়ে খরচ বেশি হয়ে যায়, আবার জাতীয় পর্যায়ে পণ্য তোলার সুযোগও নেই।
তরুণ উদ্যোক্তা ফারুক হাসান আক্ষেপ করে বলেন, “আমাদের পণ্য ঢাকার মার্কেটে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে না। সবকিছু স্থানীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ।” অন্যদিকে বুটিক উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার বলেন, “অনলাইন ডেলিভারি খরচ এত বেশি যে লাভ থাকেনা। সরকারি মার্কেটিং সাপোর্ট ছাড়া এগোনো কঠিন।”
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি খুলনার সভাপতি ইফতেখার আলী বাবু বলেন, “ক্ষুদ্র শিল্পে কর্মসংস্থানের অসীম সম্ভাবনা আছে। শুধু সহজ ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এখন যেভাবে উদ্যোক্তারা একা সংগ্রাম করছেন, তাতে তারা টিকতে পারবেন না।”
বিসিক খুলনা অবশ্য বলছে, উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপমহাব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, “আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, সহজ শর্তে ঋণের চেষ্টা করছি। শিল্পনগরীতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।” কিন্তু উদ্যোক্তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে এসব সুবিধা কার্যকরভাবে পৌঁছাচ্ছে না।
অর্থনীতিবিদদের মতে, খুলনায় ক্ষুদ্র শিল্প শুধু স্থানীয় কর্মসংস্থানই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অবদান রাখতে পারে। কৃষি ও নদীকেন্দ্রিক শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিলে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এজন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, সহজ ঋণপ্রাপ্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও মার্কেটিং সাপোর্ট।
খুলনা বিসিকের তথ্যমতে, বর্তমানে পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তার নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, কেবল নিবন্ধন করলেই সমস্যা সমাধান হয় না। তাদের দরকার বাস্তব সহায়তা।
বাংলাবার্তা/এমএইচও