
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংবাদ এসেছে। দীর্ঘ সময়ের টানাপোড়েন কাটিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বুধবার (২৭ আগস্ট) দিনের শেষে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফ অনুমোদিত বিপিএম৬ মানদণ্ডে হিসাব করলে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
এর আগে ২৫ আগস্ট (রবিবার) রিজার্ভ কিছুটা কম ছিল—তখন গ্রস হিসাবে ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম৬ হিসাবে ২৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আকু’কে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কারণে রিজার্ভ এক ধাপে নেমে গিয়েছিল গ্রস হিসাবে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়নে এবং বিপিএম৬ অনুযায়ী ২৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়নে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েকটি কারণে রিজার্ভ আবারও বাড়তে শুরু করেছে—
রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন – বৈধপথে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বেড়েছে।
রপ্তানি আয় বৃদ্ধি – পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ঋণ সহায়তা – বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও অন্যান্য সংস্থা থেকে ঋণ সহায়তা যোগ হয়েছে।
এই তিনটি কারণ একত্রে কাজ করায় রিজার্ভ আবারও ৩১ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ স্পর্শ করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটে পরবর্তী বছরগুলোতে রিজার্ভ কমতে থাকে।
২০২৪ সালের জুলাই শেষে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রিজার্ভ নেমে আসে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে—যা ছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে নিম্নতম পর্যায়।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। প্রবাসীদের বৈধ পথে টাকা পাঠাতে নানা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ডলারে হিসাব করলে, এই সময়ে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
রিজার্ভের এই বৃদ্ধি স্বস্তিদায়ক হলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও ঋণ সহায়তার ওপর নির্ভর না করে টেকসই সমাধান খুঁজতে হবে। এজন্য রপ্তানি খাতকে আরও বৈচিত্র্যময় করা, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা উন্নত করা জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচও