
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে। ইসরাইলের অবরোধ ও টানা হামলার কারণে খাদ্য, পানি ও ওষুধ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে পুরো অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ। গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১৩–তে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে শিশু রয়েছে অন্তত ১১৯ জন।
জাতিসংঘের সতর্কবার্তা
বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক বিবৃতিতে কর্মকর্তারা বলেন, গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। জয়েস মুসুইয়া, যিনি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান, তিনি জানান—“এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটি সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট একটি বিপর্যয়।” তিনি আরও সতর্ক করেন, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে, এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেও তা ছড়িয়ে পড়বে।
মুসুইয়া আরও বলেন, বর্তমানে পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি। সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা অন্তত ৬ লাখ ৪০ হাজারে পৌঁছাবে। কার্যত গাজার কোনো মানুষই ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত নয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক
ইসরাইল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিবেদনের বিরোধিতা করছে। জাতিসংঘ সমর্থিত দুর্ভিক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি সম্প্রতি যে বিশ্লেষণ দিয়েছে, ইসরাইল সেটিকে ‘ভুল ও অপেশাদার’ বলে দাবি করেছে এবং তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য সব সদস্য দেশ আইপিসি–র প্রতিবেদনের পক্ষে মত দিয়েছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট
অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে অন্তত ৪৩ হাজার শিশু আগামী মাসগুলোতে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং বলেন, গাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো কঙ্কালসার শিশুতে ভর্তি। তারা এতটাই দুর্বল যে কাঁদার শক্তিও তাদের নেই।
তিনি করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেন, আগে গাজার শিশুরা আঁকায় ফুটিয়ে তুলত ভবিষ্যতের স্বপ্ন, কিন্তু এখন তারা কেবল খাবারের ছবি আঁকছে। কিছু শিশু মৃত্যুর ইচ্ছাও প্রকাশ করছে। এক শিশুর চিঠি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বর্গে গেলে আমি মায়ের সঙ্গে থাকতে পারব, খাবার পাব, পানি পাব।”
ক্ষুধা এখন যুদ্ধের অস্ত্র
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একযোগে বলছে, গাজায় ক্ষুধাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও যুদ্ধ আইন লঙ্ঘন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য অবরোধ শুধু গণহত্যাই নয়, এটি প্রজন্ম ধ্বংসের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়লেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোর খোলার জন্য চাপ বাড়ছে। তবে বাস্তবতার ভেতর গাজার মানুষ দিনকে দিন মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও