
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর একটি পরিদর্শক দল প্রায় দুই মাস পর অবশেষে তেহরানে ফিরেছে। যদিও এই ফেরার মধ্য দিয়ে ইরান ও আইএইএ-র সম্পর্ক স্বাভাবিক হলো কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ তেহরান স্পষ্ট জানিয়েছে—পরিদর্শন চালানোর অনুমতি দিলেও কোনো নতুন সহযোগিতা কাঠামো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, আইএইএ-র পরিদর্শক দল সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতিতে ইরানে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, “আমরা সংস্থার সঙ্গে নতুন কাঠামো নিয়ে কেবল আলোচনা করছি। এখনো কোনো লিখিত বা চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।”
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইকানা জানিয়েছে, বুশেহর পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানি পরিবর্তনের কাজ আইএইএ-র পরিদর্শকদের উপস্থিতিতেই সম্পন্ন করতে হবে। বুশেহর ইরানের একমাত্র সক্রিয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা আন্তর্জাতিকভাবে সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে।
এর আগে চলতি বছরের জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর আইএইএ-র সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করেছিল ইরান। তেহরানের অভিযোগ, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও আইএইএ সেই ঘটনাকে নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়। যদিও বুশেহর চুল্লি সরাসরি হামলার শিকার হয়নি, তবে ইরানের একাধিক স্থাপনা আক্রান্ত হয়।
আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি মঙ্গলবার মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন যে তাদের পরিদর্শক দল ইতোমধ্যে ইরানে ফিরেছে। তিনি বলেন, “ইরানে অনেক স্থাপনা রয়েছে। কিছু আক্রান্ত হয়েছে, কিছু হয়নি। আমাদের কাজ কীভাবে পুনরায় শুরু করা সম্ভব, সেটি এখন আলোচনার বিষয়।”
আইএইএ দলের আগমনের ঠিক পরদিনই ইরান জেনেভায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বৈঠক করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২০১৫ সালের যৌথ পরমাণু চুক্তি—জেসিপিওএ অনুযায়ী ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ প্রয়োগ করা হবে। এর অর্থ হলো, ইরান চুক্তি ভঙ্গ করলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার কার্যকর হবে। ইউরোপ জানিয়েছে, আগস্টের শেষ নাগাদ এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
তেহরান অবশ্য এ হুমকি এড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকালের বৈঠক ছিল জুন মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে বিরতির পর ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে ইরানের দ্বিতীয় বৈঠক। সেই যুদ্ধে ইসরায়েল নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
যুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ওয়াশিংটন এখনো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। অন্যদিকে ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ জ্বালানি উৎপাদনের জন্যই।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জেসিপিওএ অনুযায়ী ইরান নিয়মিতভাবে আইএইএ পরিদর্শক দলের প্রবেশাধিকার দিতে সম্মত হয়েছিল। এর বিনিময়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। সেই থেকে চুক্তি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, আইএইএ-র ফেরার মধ্য দিয়ে কি নতুন কোনো সমঝোতার পথ খুলবে, নাকি ইউরোপীয় দেশগুলোর হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে তেহরান আবারো একা হয়ে পড়বে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ