
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা এখন সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়। ক্ষমতাসীন পক্ষ বলছে, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো জোরালোভাবে দাবি করছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একমাত্র পথ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই দ্বন্দ্ব মীমাংসার দায়িত্ব এখন আপিল বিভাগের হাতে। অক্টোবরের শেষ দিকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শুরু হবে। এর আগেই বিষয়টি নিয়ে জনমনে কৌতূহল বাড়ছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরালে সেটি কবে থেকে কার্যকর হবে?
বুধবার (২৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, “আপিল বিভাগ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের রায় দেন, তবে আদালতই নির্ধারণ করবেন সেটি কবে থেকে কার্যকর হবে। কারণ আদালতের এখতিয়ার আছে নতুন গাইডলাইন দেওয়ার।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টও তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেকোনো প্রশ্নের সমাধান করতে পারে। কোর্ট চাইলে নির্বাচনের আগে বা পরে, যে সময় প্রয়োজন মনে করবে, তখনই কার্যকর করার সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।”
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দিয়ে তিনি সাংবিধানিক অপরাধ করেছেন। তার এ অপরাধের শাস্তি ৭ বছর।”
অন্যদিকে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা শুনানির সময় বলেছেন, তারা কোনো সাময়িক সমাধান চান না। বরং দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানই হবে আদালতের লক্ষ্য। ফলে রাজনৈতিক মহল এবং আইনজীবী সমাজে ধারণা তৈরি হয়েছে, আদালত এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে আছে।
বিরোধী দল সমর্থিত আইনজীবীরাও আশাবাদী। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, “যদি আদালত রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করেন, জনগণ তাদের হারানো ভোটাধিকার ফিরে পাবে।”
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “এ দেশের মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট দেওয়ার অধিকার একবার পেয়েছিল। আদালত যদি রিভিউ মঞ্জুর করেন, সেই অধিকার আবার ফিরবে।”
ব্যারিস্টার শিশির মনির বলেন, “আইনে থাকুক বা না থাকুক, কোর্টের নিজস্ব প্র্যাকটিস অব্যাহত থাকবে। এ কারণে শুনানির আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। শুনানি হবে পুনরায় খোলার সঙ্গে সঙ্গেই।”
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী বদিউল আলম মজুমদারও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায় বাতিল হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এলে নির্বাচনী রাজনীতিতে আস্থার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চার দফা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এই নির্বাচনগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের চোখে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। এর পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকট ও রাজনৈতিক সংঘাত থামেনি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ