
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আবারও আলোচনায় এসেছে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ইস্যু। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরাইলি সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন একাধিক সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমকর্মী। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের ফিলিস্তিনি ক্যামেরাম্যান হুসাম আল-মাসরি এবং বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একজন সাংবাদিক। তবে ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে—তারা কোনোভাবেই সাংবাদিকদের সরাসরি লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি বলেন,
“আমরা নিশ্চিত করতে পারি, রয়টার্স এবং এপি-র সাংবাদিকরা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না। হামলাটি অন্য লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়েছিল।”
তিনি আরও জানান, হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেনাপ্রধান অনুমোদন প্রক্রিয়া ও ব্যবহৃত গোলাবারুদ সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য আলাদা নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার নাসের হাসপাতালে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, তখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকসহ অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
রয়টার্সের ক্যামেরাম্যান হুসাম আল-মাসরি সরাসরি সম্প্রচারের কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে তার লাইভ ফিড বন্ধ হয়ে যায়। পরে উদ্ধারকর্মীরা তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতির খবর সরাসরি নাসের হাসপাতাল থেকেই সম্প্রচার করছিল রয়টার্স ও এপি। আহতদের চিকিৎসা, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এবং বিমান হামলার তাৎক্ষণিক দৃশ্য এখান থেকেই বিশ্বমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছিল। তাই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
হামলার বিষয়ে ইসরাইলি সেনারা একটি লিখিত বিবৃতিও প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা ছয়জন ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে, যাদের ‘লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের কথিত সদস্যও ছিল বলে দাবি সেনার। তবে নিহত সাংবাদিকরা ওই তালিকায় ছিলেন না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “যুদ্ধক্ষেত্রে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আমরা দুঃখিত।” পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ‘ফাঁক’ রোধে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো বলছে, সাংবাদিকরা সরাসরি হামলার লক্ষ্যবস্তু না হলেও গাজার পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও