
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ৩১টি ব্যাংকের সম্মিলিত ক্ষতি ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল কারণ হলো দুর্বল বিনিয়োগ নীতি, তহবিলের অপব্যবহার, জাঙ্ক স্টক এবং অভিজ্ঞতার অভাব।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেসরকারি ব্যাংকও দোষ免 হয়নি। বিদেশি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণ না করায় তারা নিরাপদ থাকলেও স্থানীয় ব্যাংকগুলো বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এই ক্ষতি আনরিয়ালাইজড। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করেনি, কিন্তু বাজার মূল্যের পতনের কারণে পোর্টফোলিওর মান কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক ২০২৪ সালে ১৬ শতাংশ কমেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূল কারণ হলো ব্যাংকগুলোর অদক্ষ পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট।
তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য তৈরি নয়। শেয়ারবাজারের রিটার্ন অনিশ্চিত। বিনিয়োগ পেশাদারদের হাতে হওয়া উচিত।”
আলী ইমাম, এজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও, বলেন, “ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা দিয়ে বিনিয়োগ করে না। ট্রেজারি বা ঋণ পরিচালনায় দক্ষ কর্মকর্তারা ইক্যুইটি পরিচালনায় দুর্বল। এই অভিজ্ঞতার অভাবই বড় ক্ষতির মূল কারণ।”
বাজারে জাঙ্ক স্টক, যেমন বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডে অতিরিক্ত বিনিয়োগ, জনতা ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংককে বড় ক্ষতির মুখে ফেলে। জনতা ব্যাংকের ক্ষতি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক ৩৯৮ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৩৫৩ কোটি এবং সাউথইস্ট ব্যাংক ৩২৬ কোটি টাকার লোকসান করেছে। এছাড়া এনআরবি, রূপালী, উত্তরা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির মধ্যে।
ইমাম বলেন, “শেয়ারবাজারের পোর্টফোলিও পরিচালনায় অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। সাধারণ ট্রেজারি বা ঋণ কর্মকর্তা যথাযথ পেশাদার নয়। অভিজ্ঞতার অভাবে ব্যাংক বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ একটি ভিন্ন দক্ষতা প্রয়োজন, যা অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো নয়। পেশাদার অভাবে ব্যাংক আরও ক্ষতির মুখে পড়বে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নীতি পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন, অভিজ্ঞ পোর্টফোলিও ম্যানেজার নিয়োগ করা উচিত এবং জাঙ্ক স্টকে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে, শেয়ারবাজারে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও