
ছবি: সংগৃহীত
তৈরি পোশাক শিল্পে (আরএমজি) সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরিগুলোকেও নগদ প্রণোদনার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতদিন রপ্তানি প্রণোদনা কেবলমাত্র নিজস্ব কারখানায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পেত। নতুন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শিল্পের বড় অংশের সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোও এর সুফল পাবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশের জোগান দেয়। তবে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের শুল্ক সুবিধা সীমিত। সাম্প্রতিক আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকে শুল্কহার ২০ শতাংশে নামালেও ভারত ও চীনের তুলনায় এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
এই বাস্তবতায় সরকার মনে করছে, রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি তাদের সাব-কন্ট্রাক্ট অংশীদারদেরও উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরি সরাসরি সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাবে না। রপ্তানিকারকের মাধ্যমে ০.৩ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার অংশ তাদের হাতে পৌঁছাবে। অর্থাৎ, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যে প্রণোদনা পাবে, তার একটি অংশ সাব-কন্ট্রাক্ট উৎপাদনকারীদের দেওয়া হবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “সাব-কন্ট্রাক্ট কোম্পানিগুলো সরাসরি এক্সপোর্ট করে না, তাই বিল অব এন্ট্রি তাদের নামে খোলা যায় না। এজন্য সরাসরি প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ইতিবাচক। ভবিষ্যতে আমরা আলাদা মডিউল তৈরি করে সাব-কন্ট্রাক্টরদের সরাসরি প্রণোদনা দেওয়ার পথ খুঁজতে পারি।”
এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “সাব-কন্ট্রাক্টরদের প্রণোদনা দেওয়া হলে রপ্তানিকারকরাও আন্তর্জাতিক বায়ারদের সঙ্গে দরকষাকষিতে সুবিধা পাবে। এতে দেশের পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা বাড়বে।”
বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “ব্যাক টু ব্যাক এলসি যিনি খুলবেন, তিনি প্রণোদনা পাবেন। সাব-কন্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি টাকা না পেলেও এর সুবিধার অংশীদার হবে।”
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান বাবু বলেন, “আমরা সরকারকে প্রণোদনার হার আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। কারণ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রম অসন্তোষ ও ব্যাংকিং সংকটে শিল্প খাত মারাত্মক চাপের মুখে রয়েছে।”
শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, নতুন উদ্যোগের ফলে ক্ষুদ্র কারখানাগুলো টিকে থাকার সুযোগ পাবে। একইসঙ্গে বড় রপ্তানিকারকরা নির্দ্বিধায় সাব-কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করবে, যা সামগ্রিক উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই–এপ্রিল সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.২০ বিলিয়ন ডলারে। সরকার মনে করছে, সাব-কন্ট্রাক্টরদের প্রণোদনার আওতায় আনা হলে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও