
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তির খবর—ডলার সংকটের বৃত্ত থেকে অবশেষে মুক্তি মিলেছে। নতুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা চার বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার যে ভয়াবহ সংকট ছিল, তা কেটে গেছে। এখন আয় বেশি, খরচ কম। ফলে রিজার্ভ বাড়ছে, ডলারের দাম স্থিতিশীল হয়েছে এবং অর্থনীতির গতি ফের শক্তিশালী হচ্ছে।
অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহের উন্নতি, পাচার কমে আসা এবং আমদানি খরচে নিয়ন্ত্রণ—সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশ অর্থনীতির ডলার ঘাটতি ঘুরে উদ্বৃত্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতি বজায় থাকলে ডলার বাজারে আর কৃত্রিম চাপ তৈরি হবে না।
দীর্ঘ ঘাটতির অবসান
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, টানা আট বছর ১১ মাস অর্থাৎ প্রায় নয় বছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত দেখা গিয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এরপর প্রতিটি অর্থবছরই ঘাটতি বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে ২০২৪ সালের জুনে এসে পাল্টায় চিত্র—ঘাটতি মিটে উদ্বৃত্ত দেখা দেয় ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের।
কেন হয়েছিল ডলার সংকট
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা পাচার ও হুন্ডির কারণে বৈধ রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ছিল সংকটের মূল কারণ। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাপ আরও তীব্র হয়। করোনা পরবর্তী সময়ে কিছুটা স্বস্তি মিললেও বৈশ্বিক মন্দা শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ডলার বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় এবং প্রতি ডলার একসময় ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।
রিজার্ভের ধস ও পুনরুদ্ধার
২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮০৬ কোটি ডলার থাকলেও পরবর্তী তিন বছরে ধীরে ধীরে কমতে কমতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে নেমে আসে ২৫৮২ কোটিতে। ওই সময়ে নিট রিজার্ভ ছিল মাত্র ২০৩৯ কোটি ডলার। তবে নতুন সরকার আসার পর দেনা শোধের পাশাপাশি রিজার্ভ বৃদ্ধির কৌশল নেওয়া হয়। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৭ কোটি ডলার, যা ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে।
ডলারের দাম স্থিতিশীল
২০২১ সালের আগে ডলার ছিল ৮৫ টাকার ঘরে। ২০২২ সাল থেকে দাম বাড়তে বাড়তে ২০২৪ সালে প্রতি ডলার বাজারে ১৩০ টাকায় পৌঁছায়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ২০২৫ সালের আগস্টে প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে রয়েছে।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা কেটে গেলে আবারও আমদানি ব্যয় বাড়বে। তখন বর্তমান উদ্বৃত্ত অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। তাই সরকারকে রপ্তানি আয়ের বহুমুখীকরণ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়াতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য এক বড় সুযোগ। যদি সঠিক নীতি গ্রহণ করা যায়, তবে দীর্ঘমেয়াদে ডলার সংকটের ভয় আর ফিরে আসবে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচও