
ছবি: সংগৃহীত
৭৫ হাজার কোটি ডলারের বৈশ্বিক হস্তশিল্প বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব এক শতাংশেরও কম। অথচ পাট, কাঠ, বাঁশ, বেতসহ নানা কাঁচামালে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক নীতি, প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি থাকলে এই খাতে বাংলাদেশের আয় বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।
ফরিদপুরের কৃষক হরিচন্দ্র বলেন, “আমরা শুধু পাট ফলাই, কিন্তু তার আসল দাম পাই না। ব্যাপারীরা স্টক করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করে। আমাদের হাতে কিছুই আসে না।”
উদ্যোক্তা রাশেদ রেজা বলেন, “এক মণ পাট বিক্রি করে যে দাম পাওয়া যায়, সেই দামে আমরা তিনটি ব্যাগ তৈরি করি। অথচ ওই ব্যাগ আন্তর্জাতিক বাজারে বহুগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। এভাবে কৃষক ও উদ্যোক্তা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত।”
ভারত, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া নিজেদের ঐতিহ্যকে আধুনিক বাজারে প্যাকেজিং করে বিশাল অর্থনীতি দাঁড় করিয়েছে। যেমন—
-
ইন্দোনেশিয়া কেবল বাঁশ-বেতজাত পণ্য রফতানি করে বছরে ২.২২ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
-
ভারত বাংলাদেশের পাট কিনে রঙিন, ডিজাইন করা ব্যাগ বানিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি করছে।
-
ভিয়েতনাম বাঁশ-খড়-চামড়ার হস্তশিল্পে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
ড. মাহফুজ কবির বলেন, “এগুলো উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কাঁচামাল নয় বরং ফিনিশড প্রোডাক্টই মূলত অর্থনীতিকে টেকসই করে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সমস্যাগুলো হলো—
-
মানসম্পন্ন ডিজাইনারের অভাব
-
আন্তর্জাতিক মান রক্ষা না করা
-
দক্ষ কারিগরের অভাব
-
উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়া
-
নীতিগত দুর্বলতা
এসএমই খাত বিশেষজ্ঞ ড. মফিজুর রহমান বলেন, “থাইল্যান্ডে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে। সেখানে মাত্র ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যদি এ ধরনের নীতি থাকত, আমাদের হস্তশিল্প খাত বিশ্ববাজারে অনেক দূর এগিয়ে যেত।”
বাংলাদেশের বাঁশ, বেত, কাঠ, মাটির পণ্য ও পাটভিত্তিক শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন—
-
আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের অংশগ্রহণ
-
গ্লোবাল ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন পণ্য তৈরি
-
সবুজ অর্থায়ন ও টেকসই পণ্যে জোর দেওয়া
-
আর্থিক কূটনীতির মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণ
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পোশাক খাতের মতো হস্তশিল্পেও বাংলাদেশ বড় অংশীদার হতে পারে। তবে এজন্য কেবল কাঁচামাল রফতানির চিন্তা বাদ দিয়ে মূল্য সংযোজনভিত্তিক চূড়ান্ত পণ্য তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও