
ছবি: সংগৃহীত
আগস্ট মাসে প্রবাসী আয়ের ধারা মোটামুটি ইতিবাচক থাকলেও দেশের কিছু ব্যাংকের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসের প্রথম ৩০ দিনে ২২২ কোটি ৮৯ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসলেও দেশের ৯টি ব্যাংকে একটি ডলারও আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংক, একটি বিশেষায়িত ব্যাংক, চারটি বেসরকারি ব্যাংক এবং তিনটি বিদেশি ব্যাংক।
কোন ব্যাংকে আসেনি রেমিট্যান্স
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল) পুরো মাসে কোনো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারেনি। বিশেষায়িত খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) একই অবস্থায় পড়েছে। এছাড়া বেসরকারি খাতের কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, সিটিজেন্স ব্যাংক পিএলসি, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকও রেমিট্যান্সহীন থেকেছে। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে আগস্ট মাসের প্রথম ৩০ দিনে কোনো রেমিট্যান্স প্রবাহিত হয়নি।
অন্য ব্যাংকগুলোর অবস্থান
শূন্য রেমিট্যান্স পাওয়া ব্যাংকের তালিকা থাকলেও সামগ্রিকভাবে আগস্ট মাসে দেশের অন্যান্য ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহে সক্রিয় ছিল।
-
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৮ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার ডলার।
-
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো পেয়েছে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ডলার।
-
বেসরকারি ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে—১৪৫ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ডলার।
-
বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে মাত্র ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
সাপ্তাহিক রেমিট্যান্স প্রবাহ
আগস্টের পুরো মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ধাপে ধাপে ওঠানামার মধ্য দিয়ে।
-
আগস্টের ২৪ থেকে ৩০ তারিখে এসেছে ৪৮ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
-
১৭ থেকে ২৩ আগস্টে এসেছে ৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
-
১০ থেকে ১৬ আগস্টে এসেছে ৫৮ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
-
৩ থেকে ৯ আগস্টে এসেছে ৬১ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
-
আগস্টের প্রথম দুই দিনে দেশে এসেছে ৬ কোটি ৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
এই ধারাবাহিকতায় পুরো আগস্ট মাসে মোট রেমিট্যান্স দাঁড়ায় ২২২ কোটি ৮৯ লাখ মার্কিন ডলার।
গত জুলাইয়ের তুলনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগস্ট মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি।
-
জুলাইয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
-
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ডলার।
-
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
-
বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো পেয়েছিল ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
এ থেকে বোঝা যায়, আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমলেও সামগ্রিকভাবে প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বার্ষিক রেকর্ড
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর জুড়ে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন মোট ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এটি দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
বিশ্লেষণ ও প্রভাব
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের সামগ্রিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স না আসা ব্যাংকগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা, প্রবাসী সেবা এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন নেটওয়ার্ক দুর্বলতার ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিডিবিএল বা বিশেষায়িত রাকাবের মতো ব্যাংকে শূন্য রেমিট্যান্স পাওয়া প্রবাসীদের আস্থার বড় সংকটের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ক্রমেই প্রবাসী আয়ের বড় অংশ দখল করে নিচ্ছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সরকারি ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স বাজারে আরও পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ