
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলি সেনাদের হামলায় গাজা উপত্যকা আবারও রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু, সাংবাদিক ও ত্রাণ সহায়তা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষও। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এ মৃত্যু সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকে আছেন অনেকে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) গাজা সিটির একাধিক আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শুধু ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনগুলোর আশপাশে এখনও নিখোঁজ বহু মানুষকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে—ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কান্নারত পরিবারগুলো, আহত শিশু ও জরুরি সহায়তার জন্য চিৎকার করা সাধারণ মানুষ।
আল জাজিরা জানায়, গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরাইলি সেনারা সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কার্যকর করতে মরিয়া তারা। এর অংশ হিসেবে রোববার দেইর আল বালাহ শরণার্থী শিবিরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বোমাবর্ষণ করা হয়। হামলায় বহু মানুষ হতাহত হন।
একইদিনে গাজায় প্রাণ হারান ইসলাম মুহারেব আবেদ নামের এক সাংবাদিক। তিনি ঘটনাস্থল কভার করার সময় ইসরাইলি হামলার শিকার হন। এর মাধ্যমে চলমান যুদ্ধের সময় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা আরও বেড়ে গেল।
অন্যদিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, তাদের সামরিক বাহিনী ও শিন বেট (গৃহনিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) যৌথভাবে হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদাকে লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করেছেন—আবু উবাইদা নিহত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি হামাস।
ইসরাইলের সেনাপ্রধান ইয়াল জামির স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে আরও তীব্র অভিযান চালানো হবে। গাজায় সেনা মোতায়েন বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত হামাস নেতাদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে। তার এই বক্তব্য নতুন করে আশঙ্কা জাগিয়েছে যে, সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নেবে।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন ইসরাইলি অভিযানের কারণে মানবিক সংকট আরও প্রকট হবে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, সামরিক অভিযান চলতে থাকলে খাবারের সহজলভ্যতা সীমিত হয়ে পড়বে। মানবিক কর্মীরাও নিরাপদে কাজ করতে পারবেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মানবিক কর্মীরা কোনো লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না এবং এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
এছাড়া জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজা সিটির বাসিন্দারা দক্ষিণে যেতে পারছেন না, কারণ আশ্রয়ের জায়গা নেই এবং মৌলিক সেবা প্রায় অদৃশ্য। এতে মানবিক সংকট আরও গভীর আকার ধারণ করছে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার চিত্র এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, কয়েক মাসের এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে বহু হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের এক-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। ধ্বংস হয়েছে স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ ও ঘরবাড়ি। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে এখন খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি এবং আশ্রয়ের তীব্র সংকট চলছে।
একদিকে ইসরাইলি সেনারা দাবি করছে হামাসকে দুর্বল করতে হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে এই যুদ্ধ মূলত সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। প্রতিদিন নতুন করে লাশ যোগ হচ্ছে। গাজায় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একদিকে বিমান ও গোলাবর্ষণ, অন্যদিকে মানবিক সহায়তার অভাব—সব মিলিয়ে গাজা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ