
ছবি: সংগৃহীত
সকালে দিনের শুরুটা পুষ্টিকর খাবার দিয়ে করা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আর সেই তালিকায় বাদাম অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাবার। আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম বা চিনাবাদাম—সব ধরনের বাদামেই রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট, যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে সকালে বাদাম খাওয়ারও কিছু নিয়ম আছে। কারণ অনেক সময় খাওয়ার ভুল পদ্ধতি বা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে শরীরে উপকারের বদলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বাদাম খাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা সম্পর্কে জানা জরুরি।
১. খালি পেটে অতিরিক্ত বাদাম নয়
অনেকেই সকালে খালি পেটে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালি পেটে একসঙ্গে অনেক বাদাম খেলে শরীরে অম্লতা বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে গ্যাস, বুকজ্বালা বা হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য খালি পেটে বেশি বাদাম ক্ষতিকর হতে পারে। সকালে চাইলে ভিজিয়ে রাখা ৪–৫টি বাদাম খাওয়া ভালো, কিন্তু এক মুঠো বাদাম একসঙ্গে খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ওজনের ঝুঁকি
বাদাম খুবই পুষ্টিকর, তবে এতে প্রচুর ক্যালোরি ও ফ্যাটও থাকে। সকালে একসঙ্গে বেশি বাদাম খেলে শরীর দ্রুত এনার্জি পেলেও অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি জমে যায়। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন বা ডায়েটে আছেন, তাদের জন্য সকালে অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়েটিশিয়ানরা পরামর্শ দেন—সকালে পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেতে।
৩. অ্যালার্জির ঝুঁকি
সবাই বাদাম খেতে পারবেন এমন নয়। অনেকের শরীরে বাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকে। বিশেষ করে চিনাবাদাম বা কাজুবাদাম খেলে কারও কারও শরীরে লাল ফুসকুড়ি, চুলকানি, চোখে পানি পড়া, এমনকি শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও হতে পারে। সকালে খালি পেটে বাদাম খেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া আরও দ্রুত দেখা দিতে পারে। যাদের আগে থেকে বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে, তারা অবশ্যই খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
৪. থাইরয়েড রোগীদের সতর্কতা
থাইরয়েড রোগীদের জন্য কিছু ধরনের বাদাম সবসময় উপকারী নাও হতে পারে। যেমন চিনাবাদাম ও আখরোটে থাকা কিছু উপাদান থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে নিয়মিত বা অতিরিক্ত বাদাম খেলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তাই থাইরয়েড রোগীরা প্রতিদিন কতটুকু বাদাম খাবেন, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই ভালো।
৫. কিডনি সমস্যায় সীমিত বাদাম
বাদামে প্রচুর পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। যাদের কিডনি দুর্বল বা আগে থেকেই কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই খনিজগুলো অতিরিক্ত হয়ে শরীরে ক্ষতি করতে পারে। কিডনি পর্যাপ্তভাবে ফিল্টার করতে না পারলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হার্ট ও স্নায়ুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কিডনি রোগীরা সকালে বাদাম খেলেও তা খুব সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।
বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে বাদাম খেতে চাইলে সেটি ভিজিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। এক রাত ভিজিয়ে রাখা ৪–৫টি কাঠবাদাম বা কাজুবাদাম শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এতে হজম সহজ হয়, পুষ্টিগুণ সহজে শোষিত হয় এবং খাওয়ার পর শরীরে অস্বস্তিও তৈরি হয় না।
বাদাম নিঃসন্দেহে পুষ্টিকর খাবার এবং শরীরের জন্য উপকারী। তবে খাওয়ার সময় সঠিক নিয়ম মানতে হবে। খালি পেটে অতিরিক্ত বাদাম নয়, অ্যালার্জি থাকলে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে, কিডনি ও থাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাদামের মতো স্বাস্থ্যকর খাবারও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি। কারণ স্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি হলো—সতর্কতা ও পরিমিতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ